গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলের অবরোধ ও হামলার কারণে মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় আরও ১০ জন ক্ষুধায় মারা গেছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৩ জনে, যার মধ্যে ১১৯ জন শিশু রয়েছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) অধিকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ মূলত মানবসৃষ্ট এবং এটি পরিকল্পিত বিপর্যয়।
জাতিসংঘের উপ-মানবিক বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জয়েস মুসুয়া প্রকাশ করেছেন, গাজা জেলার উত্তর-মধ্যাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেপ্টেম্বরের শেষের মধ্যে এটি দেইর এল-বালাহ ও খান ইউনিস পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ অনাহারে জীবনযাপন করছে। সামনের মাসে এই সংখ্যা হতে পারে ৬ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি। গাজায় ক্ষুধার প্রভাব থেকে কেউই বাদ পড়েনি।
মুসুয়া আরও জানিয়েছেন, কম বয়সি শিশুদের মধ্যে অন্তত ১ লক্ষ ৩২ হাজার শিশু তীব্র পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে; এদের মধ্যে ৪৩ হাজারেরও বেশি শীঘ্রই প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা খরা নয়, বরং এই দুর্ভিক্ষ এর সৃষ্টি হয়েছে যুদ্ধের কারণে। এটা মৃত্যুর, ধ্বংসের এবং বাস্তুচ্যুতির ফল।’
অন্যদিকে, ইসরায়েল দাখিল করেছে দুর্ভিক্ষ পর্যবেক্ষণ সংস্থার (আইপিসি) গাজা সম্পর্কিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রত্যাহার করার আহ্বান। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এডেন বার টাল অভিযোগ করেন, প্রতিবেদনটি ত্রুটিপূর্ণ ও অপেশাদার, এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য নেই।
তবে, যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য ১৪ জাতির সদস্যরা এই প্রতিবেদনের কাজকে সমর্থন জানিয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজার দুর্ভিক্ষ অবিলম্বে বন্ধ করা জরুরি।’ বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ অনুরোধ জানানো হয়।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রধান ইঙ্গার আশিং নিরাপত্তা পরিষদে এক তীক্ষ্ণ ভাষণে বলেন, ‘গাজায় দুর্ভিক্ষ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। শিশুরা অনাহারে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাদেরকে ধ্বংস ও যুদ্ধের সরাসরি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজার ক্লিনিকগুলোতে এখন হাড়জিরজিরে শিশুদের নিঃশব্দতা বিরাজ করছে—তাদের কান্নার মতো কোনও শব্দ থাকছে না, তারা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছে।’
আশিং আরও উল্লেখ করেন, এখন শিশুরা স্কুল বা শান্তির আশায় নয়, তাদের শুধু খাবার ও জীবন বাঁচানোর জন্যই চায়। এক শিশুর চিত্রাঙ্কণে লেখা ছিল: “আমি জান্নাতে যেতে চাই, যেখানে আমার মা আছেন। সেখানে ভালোবাসা, খাবার ও পানি আছে।”
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে তাঁরা গাজা যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে গাজা যুদ্ধের ‘নির্দিষ্ট সমাপ্তি’ আশা করছেন, যদিও এখনো কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বৈঠকের বিস্তারিত প্রকাশিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠন কর্মসূচি স্পষ্ট না হলে গাজার পুনরুদ্ধার করতে অসুবিধা হবে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, তারা দীর্ঘমেয়াদে গাজায় সেনা উপস্থিতি বজায় রাখতে চায়।