রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার ছাত্র আরিফুল ইসলাম স্বপ্ন দেখতেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। তিনি পাংশা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোট থেকেই কৃষি পরিবারের সন্তান হিসেবে কৃষির প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। সবসময়ই ভাবতেন, কৃষিতেই তার ভবিষ্যত।
আপাতত নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি ইউটিউবের মাধ্যমে কৃষিসংক্রান্ত তথ্য জ্ঞান অর্জন করেন এবং পরিবারের সহায়তায় ৪০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেন। প্রথমে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করেন ঢাকা ও রংপুর থেকে, এবং নিজ বাড়িতে চারা তৈরি শুরু করেন। এরপর সেই ৪০ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন ৩০০টি পেঁপের চারা। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে রোপণ করেন টমেটো।
বর্তমানে, আরিফুল তার বাগান থেকে সপ্তাহে তিন দিন পেঁপের কাঁচা ও পাকা ফল সংগ্রাহ্ম করেন। এই পেঁপেগুলো সে পাংশা শহর ও কুষ্টিয়া জেলার numerous বাজারে বিক্রি করে থাকেন। তার এই উদ্যোগের ফলে প্রায় এক লাখ টাকার বেশি লাভ হয়েছে এবং এখনো আরও বেশি ফলপ্রসূ ফলের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে পেঁপে চাষের পরিকল্পনা করছেন।
তার বাবা মো. আব্দুল গফুর বলেন, “আমার ছেলে ছোট থেকেই মেধাবী। কিন্তু কৃষক পরিবার হওয়ায় তার পড়াশোনা চালিয়ে নামাতে পারিনি। চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়ে এক সময় সে সিদ্ধান্ত নেয়, কৃষি কাজ করবে। প্রথমে আমি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম, কারণ জানতাম পেঁপে গাছের বেশিরভাগ ফল বন্ধুর গাছ হওয়ার কারণে পাওয়া যায় না। তবে ছেলে যখন বলল, বিদেশি জাতের বীজ থেকে চারা তৈরি করে ফল দেবে, তখন আমি সমর্থন করি। এখন দেখছি, প্রতিটি গাছেই ফুল এসেছে এবং ফল পাওয়া যাচ্ছে। আমি নিজেও গরে তুলে বিক্রি করি, বেশিরভাগ পেঁপে কুষ্টিয়ায় পাঠানো হয়।”
আরিফুল বলেন, “ছোট থেকেই আমার কৃষিতে প্রবল আগ্রহ ছিল। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে আমি বিভিন্নভাবে চাকরির চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। তখন আমি ইউটিউব দেখে কৃষির বিভিন্ন বিষয় শেখা শুরু করি। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন বাজারে চারা রোপণ করি। প্রথমে ৩০০টি চারা রোপণ করি, কিন্তু দুর্বৃত্তদের হাত থেকে কিছু চারা চুরি হয়ে যায়। এরপর রাজশাহী থেকে নতুন চারা এনে রোপণ করলে মাত্র তিন মাসেই ফল দেখা শুরু হয়।
প্রথম দিকে খরচের ব্যাপারে তিনি জানান, জমি লিজ, চারা রোপণ ও পরিচর্যার জন্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এখন পর্যন্ত, তিনি প্রায় এক লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন। এখনও অনেক ফল রয়েছে, যা থেকে আরও ৭০-৮০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রির সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় জায়গায় পেঁপে চাষের পরিকল্পনা করেছেন।
পাংশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “আরিফুলের এই গল্প নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। প্রথমবারেই ৪০ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করে তিনি বড় ধরনের লাভ করেছেন। তার মাধ্যমে অন্য তরুণদের জন্যও উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি তরুণ শিক্ষিত যুবকরা বিদেশের বদলে দেশের কৃষিতে মনোযোগ দেয় এবং মাটি সঠিকভাবে ব্যবহার করে, তবে দেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে।’”
আজকের খবর