শিল্পী সমিতির উদ্যোগে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এফডিসিতে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে চার কিংবদন্তি শিল্পীর সন্তানরা একসঙ্গে উপস্থিত হয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা খান জয়নুলের ছেলে খান রাসেল টোটা, বিখ্যাত শিশু অভিনেতা মাস্টার শাকিল, কিংবদন্তি অভিনেতা এম এ মতিনের ছেলে অনজন রহমান এবং প্রবীণ অভিনেতা নাট্যকার ও সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তর ও নিশা মাহমুদা। এটি ছিল এক স্মরণীয় দিন, যেখানে বিভিন্ন প্রজন্মের শিল্পীরা একত্রিত হয়ে প্রিয় শিল্পীদের স্মৃতিকে উৎসর্গ করেন।
অনুষ্ঠানে মূল আলোচনায় ছিল বলিউড ও বাংলা চলচ্চিত্রের বিস্ময়কর তারকা সোহেল রানা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে আর পর্দায় দেখা না গেলেও চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, সহকর্মীদের প্রতি মমতা এবং দেশপ্রেমের গভীর টান অটুট। সম্প্রতি তিনি বিএফডিসিতে এক দোয়া মাহফিলে অংশ নেন, যেখানে তিনি আবেগ প্রকাশ করে জানিয়ে যান, তিনি ভুল করেছেন, অনেক ভুলও করেছেন। তিনি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন যেন মৃত্যুর পরও নিজের নীতি ও আদর্শ বজায় রাখতে পারেন।
সোহেল রানা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কবে পৃথিবী ছেড়ে যাবে, তাই এই মুহূর্তে যারা আমার সাথে কাজ করেছেন, বা করবেন, তাদের প্রতি আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি, আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাই।’ তিনি আরও যোগ করেন যে, চলচ্চিত্রের দর্শকদের কাছে অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু ভাষা হারিয়ে যেতে পারে।
অভিনয় জগতে তার অসংখ্য দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। এর পাশাপাশি ২০১৯ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়।
এদিনের অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ অভিনেতা রাজিব ও দিলদার পরিবারের সদস্যরা, যারা তাদের অভিজ্ঞতা ও আবেগের কথা শেয়ার করে মুগ্ধ করে সবাইকে। এছাড়া, দীর্ঘ সময় পর এফডিসিতে দেখা যায় খান জয়নুলের ছেলে রাসেল খানের মতো শিল্পীদের।
প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা এম এ মতিনের ছেলে অনজন রহমান, কিংবদন্তি পরিচালক আমজাদ হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল, প্রবীর মিত্রের ছেলে মিঠুন মিত্র, বুলবুল আহমেদের মেয়ে ঐন্দ্রিলা এবং আরও অনেক শিল্পী ও পরিবার সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উপরন্তু, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শিশু অভিনেতা মাস্টার শাকিল, বাপ্পারাজ, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে উপল সরফরাজ আনোয়ার, অভিনেতা শাখা, নায়িকা শাকিবা, নূতন, কায়েস আরজু, সহ আরও অনেক শিল্পীর উপস্থিতি। তবে দুঃখের বিষয়, এই অনুষ্ঠানে ছিলেন না তথাকথিত বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগ জনপ্রিয় তারকা, যেমন—অলিম্পিক, আলমগীর, উজ্জল, মাহমুদ কলি, শবনম, শাবানা, রঞ্জিতা, সুচন্দা, সুজাতা, চম্পা, রানী, শিল্পী, শাবনাজ-নাঈম। এর ফলে কিছুটা হতাশা অনুভূত হয়।
উল্লেখ্য, এই আয়োজনে বিশেষ সহযোগিতা করেছেন প্রযোজক ও শিল্পী সমিতির সদস্যরা—আরশাদ, আদনান, খোরশেদ আলম খসরু, চিত্রনায়ক মুন্না ও আহমেদ তেপান্তর। এই স্মরণসভা চলাকালীন শিল্পীদের পুরনো গুণমুগ্ধতা, ভালোবাসা ও স্মৃতি উজ্জীবিত হয়। এই উদ্যোগ সত্যিই এক বিশাল সম্মান ও শ্রদ্ধার প্রকাশ, যেখানে শিল্পীদের জীবনের নানা দিক খুব কাছ থেকে উপস্থাপন করেন সংগঠনের সদস্যরা।