যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি আগামী ১৫ বছরে ধাপে ধাপে বাংলাদেশকে এক লাখ কোটি টাকার (প্রায় ১২৩ টাকা প্রতি ডলার হিসেব করে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা) এলএনজি সরবরাহ করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এই জ্বালানি সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করছে, যা দেশের জ্বালানি সংকট কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এখন এক্সিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশে দুই দফা এসেছেন—প্রথম ২০২২ সালে ঢাকায় নিযুক্ত থাকাকালে এবং বর্তমানে আবার এই মহামারী পরবর্তী সময়ে। জানিয়েছে, পিটার হাসের নেতৃত্বে এই কোম্পানি বাংলাদেশের জন্য এলএনজি সরবরাহের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি সূচক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন এই কোম্পানি বাংলাদেশকে ২৩২ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে, যা প্রায় ১৫ বছর ধরে চলবে। মূলত ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে ২৮টি কার্গো সরবরাহ হবে, এরপর ২০২৮ থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১৬টি করে কার্গো আসবে। এর ফলে গড় বার্ষিক খরচ প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার হবে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি ক্রয় চালু থাকবে, যেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৩৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৬টি কার্গো সরবরাহ হয়েছে। ভবিষ্যতে এই স্পট মার্কেট থেকে বছরে আরও ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি কার্গো সরবরাহের সম্ভাবনাও রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের জ্বালানি ও গ্যাস সংকট কমাতে এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি কেনা হবে। এছাড়াও, বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনাও থাকবে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আলাদা করে টেন্ডার বা চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন গালফ কোস্ট রিফাইনারি থেকে ডিজেল কেনার পরিকল্পনা চলছে।
প্রকৌশলী মো. শাহ আলম, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) মহাব্যবস্থাপক, বলেছেন, এই চুক্তি বাংলাদেশের জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে এবং দেশের গ্যাস ও এলএনজি আমদানির অষ্টম স্তরে পৌঁছাতে সহায়তা করবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই চুক্তিটি মূলত ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং বর্তমান সরকারের আগের চুক্তিগুলোর মতো বাতিলের ঝুঁকি থাকলেও এটি বৈধতা পেয়েছে কারণ এটি আইনগতভাবে আবশ্যক।
এদিকে, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩.৮ মিলিয়ন টন জ্বালানি তেল আমদানির জন্য মার্কিন পরিশোধকদের অন্তর্ভুক্তির জন্য এজেন্ডায় রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মার্কিন গ্যালফ কোস্ট রিফাইনারি থেকে ডিজেল ডেলিভারির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, দেশের এলপিজির চাহিদা বাড়াতে মার্কিন সরবরাহকারীদের সঙ্গে এলপিজি কার্গোর জন্য শিগগিরই টেন্ডার শুরু করা হবে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার জ্বালানি পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা করছে।