ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা শুক্রবার পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। এই মারাত্মক পরিস্থিতিতে দৈনিক জীবনহানির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মানুষকে গভীর দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৭ জন মানুষ ক্ষুধা ও অনাহারে মারা গেছেন, এর মধ্যে একজন শিশু রয়েছে।
বার্তাসংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে জানায়, ইসরায়েলের গাজায় হামলার কারণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৬৪,৭১৮ জনে পৌঁছেছে। এই সময়ে অনাহার ও অপুষ্টির কারণে আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে এক শিশু রয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, গত একদিনে ৭২ জনের মরদেহ হাসপাতালে পৌঁছেছে, আহত হয়েছেন আরও ৩৫৬ জন। এর ফলে আহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা এতটাই যে, অনেক মৃতদেহ এখনও ধ্বংসস্তূপে পড়ে রয়েছে বা রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা অবস্থায় আছে, উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের জন্য সেখানে গেলে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরও ৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও প্রায় ৮৭ জন আহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে মে থেকেই এখন পর্যন্ত হতাহত মানুষদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২ হাজার ৪৬৫ জন নিহত এবং ১৭ হাজার ৯৪৮ জন আহত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধের শুরু থেকে দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৪১১ জন, যার মধ্যে ১৪২ জন শিশু।
বিশেষ করে, গত মাসে জাতিসংঘের সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি গাজার জন্য দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে ২৭ জনই শিশু।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার সব সীমান্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে রেখেছে, যার ফলে ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে তারা চরম অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি।
ইসরায়েলি সেনাদের নতুন করে হামলার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এই মাস পর্যন্ত, ১২ হাজার ১৭০ জন নিহত ও ৫১ হাজার ৮১৮ জন আহত হয়েছেন। এই সংঘর্ষের কারণে জানুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির কার্যকারিতা এখন সম্পূর্ণভাবে ভঙ্গ হতে চলেছে।
খবর বলছে, নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। সেই সঙ্গে, গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।