প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে, বাংলাদেশ ও চীন একসাথে এগিয়ে যাবে তাদের গভীর কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে। এই অংশীদারিত্ব উভয় দেশের জনগণের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সুখ বয়ে আনবে। গত বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূতাবাসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের নেতৃস্থানীয় সাফল্যগুলির প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে দেখে থাকেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালে চীন তার ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে, যা একই সঙ্গে জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী। তিনি বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীনের ঐতিহাসিক ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীন শাসক ও জনগণের একাধিক সাফল্য অর্জন করেছে। রাষ্ট্রদূত জানান, চীন বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির একজন শক্তিশালী শক্তি হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল গভর্নেন্স উদ্যোগের উপর জোর দিয়ে, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সমর্থন পেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এখন আরও জোরদার হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুরকে অত্যন্ত প্রশংসা করে তিনি বলেন, দুই দেশ দারুণ শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন এবং সমান সহযোগিতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব বজায় রাখবে। ভবিষ্যতেও একসঙ্গে কাজ করে একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে তারা একসাথে প্রচেষ্টায় উৎসাহী। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের উন্নয়ন, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবায় চীনের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, এই সহযোগিতা বাস্তব সুবিধা এনে দিয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন গড়ে উঠেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিমান বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশী কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদল, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্যগণ, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও থিঙ্ক ট্যাংকের বিশেষজ্ঞসহ ৬০০ জনের বেশি অতিথি। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নৃত্য, অ্যাক্রোব্যাটিক্স ও ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের কুশলী পরিবেশনা দর্শকদের মন জয় করে। পাশাপাশি চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন, জাপানি আগ্রাসনের বিরোধী চীনা জনগণের প্রতিরোধ ও বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধের ৮০তম বার্ষিকীর প্রদর্শনীও দর্শকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বুথ, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কেন্দ্রীক কর্মসূচিও উপস্থিত অতিথিদের ব্যাপক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এই উৎসবমুখর অনুষ্ঠানে দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার স্বীকৃতি আরও দৃঢ় হয়।