ধানমন্ডির রাশিয়ান হাউসে সম্প্রতি এক বিশেষ চলচ্চিত্র উৎসব ও চলমান শিক্ষামূলক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমী ও শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে তিনটি মাস্টার ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন সময় মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়া ছয়টি সিনেমা প্রদর্শিত হয়।
উৎসবের মূল বিষয়বস্তু ছিল আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সিনেমা দেখানোর অভিজ্ঞতা, যেখানে ডিসিপি (ডিজিটাল সিনেমা প্যাকেজ) ও ৭.১ সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে দর্শকদের জন্য এক immersive পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। দুই দিনের এই আয়োজনে ৭টি দেশি-বিদেশি সিনেমা দেখানো হয়, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ‘সেলিব্রেটিং সিনেমা’ শিরোনামের চারগুলো সিনেমা— ফ্রম সুরমা (২০২৪), পেয়ারার সুবাস (২০২৩), আম কাঁঠালের ছুটি (২০২৩)—অপর দিকে আন্তর্জাতিক সিনেমাগুলোর মধ্যে থাকছে চীনের ‘ইয়ুয়ান শাং’ (২০১৭), মেক্সিকো-কাতার যৌথ প্রযোজনা ‘ভারগুয়েঞ্জা’ (২০২৪), ও রাশিয়ার ‘আ সিজ ডায়েরি’ (২০২০)৷
এছাড়া, চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্য ছিলো এক অবিস্মরণীয় মিলনমেলা। চলাচলের বিশেষ গুরুত্ব ছিলো সের্গেই বন্দারচুক ফিল্ম ক্লাবের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপনে, যেখানে ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির রাশিয়ান হাউজে দুই দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। মূল উদ্বোধনী ছিল ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী, যা পরিচালনা করেন এ জে কারদার। এই ছবিটি প্রাচীন মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে স্বর্ণপদক লাভ করে, যা অনুষ্ঠানের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই আয়োজনের অংশ হিসেবে তিনটি মাস্টার ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। ২০ সেপ্টেম্বর ‘Cinema: Understanding Russian Classic’ শীর্ষক ক্লাস নেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নুরুল আলম আতিক। অন্যদিকে, ২১ সেপ্টেম্বর ‘Literature: Understanding Russian Classic’ শিখান অধ্যাপক আব্দুস সেলিম ও ‘Stanislavski: Method Acting’ বিষয়ক ক্লাস পরিচালনা করেন অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও গবেষক চিন্ময় মুৎসুদ্দি, ও বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সভাপতি জহিরুল ইসলাম কচি। মূল বক্তব্য প্রদান করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক বিবেশ রায় ও স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্য সচিব আহমেদ তেপান্তর।
১৯৯৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রগ্রাহক ও শিক্ষক এম.এ. সামাদ। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি চলচ্চিত্রপ্রেমী, শিক্ষার্থী এবং সংস্কৃতি চর্চাকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। আজকের এই সেলিব্রেশনের মাধ্যমে ক্লাবটি অতীতের ঐতিহ্যকে স্মরণ করেছে ও আধুনিক চলচ্চিত্র চর্চায় আরও এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে।