আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে নির্বিঘ্নে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বর্তমান সময়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান, সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য আমাদের কর্মপরিকল্পনা এবং প্রস্তুতিটা অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বিশেষ করে ভোটার তালিকা তৈরি, যার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ফলে নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণের ব্যবধানও কমে এসেছে। এছাড়া, নির্বাচনসংক্রান্ত বেশ কিছু আইনের প্রস্তাবনা সংশোধনের কাজ চলছে, যার মাধ্যমে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করা হবে। সিইসি এই বিষয়গুলো উল্লেখ করে জানান, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্পন্নের জন্য আমরা যে প্রস্তুতি নিচ্ছি, তা অনেকটা এগিয়ে গেছে।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের ভবনে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সংলাপে তিনি এই সব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন চারজন সহ নির্বাচন কমিশনার, ইসির জ্যেষ্ঠ সচিবসহ সংস্থাটির অন্য উচ্চতর কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা।
সংলাপে অংশ নেওয়া বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের ১২ জন প্রতিনিধি মধ্যে ছিলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মাহমুদ হাসানউজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল ওয়াজেদ, বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি, কবি মোহন রায়হান, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জারিফ রহমান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও টিআইবি’র পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান।
প্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করেছি। তবে, এখনও কিছু গ্যাপ রয়েছে, আপনারা এগুলো দ্রুত পূরণ করবেন। ভোটে বিদেশি বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাও চালু করতে যাচ্ছি, যেখানে বহু পরীক্ষার পর পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবার ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই প্রকৃয়া ব্যবহার করতে পারবে না, তাদের জন্যও সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে, যারা জেলে থাকছেন বা কারাগারে আছেন, তাদের ভোটাধিকারও নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো একটি শান্তিপূর্ণ, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। এ জন্য আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ ও সহযোগিতা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী সংবাদের জন্য ইসির জনসংযোগ শাখার একজন সহকারী পরিচালক আশাদুল হক জানান, আজ বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩৩ জন নির্বাচনী বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সংলাপ চালানো হবে।
এছাড়া, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে পুজা উৎসবের পর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক, নারীনেত্রী ও যোদ্ধাদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। বর্তমানে ৫২টি নিবন্ধিত দল রয়েছে, যাদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ বেশ কিছু দল রয়েছে। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচন অনুযায়ী, নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তবে এখন পর্যন্ত মোট ৫৬টি দল নিবন্ধন পেয়েছে। তবে কিছু দল – যেমন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা – শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে জামায়াত ও জাগপা আবার নিবন্ধন ফিরে পেয়েছে, যেখানে অন্যায়ভাবে কিছু দল ইতিমধ্যে নিবন্ধন হারিয়েছে। অন্যদিকে, আদালত নতুন দল হিসেবে বাংলাদেশের লেবার পার্টির নিবন্ধন অনুমোদন দিয়েছে।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও তফসিলিক ঘোষণা করার জন্য ইসি এখন সংশ্লিষ্ট সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে, সম্ভবত ডিসেম্বরের শুরুতেই ভোটের সময়সূচি ঘোষণা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রমজানের আগে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচনের জন্য কাজ করছে নির্বাচন কমিশন।