বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অজ্ঞাত কারণে সৃষ্টি হয়েছে সেন্সরশিপের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতি। ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালনরত তামিম ইকবালের বিরুদ্ধে একাধিক আপত্তি জমা পড়লেও, এসব অভিযোগের সত্যতা ও উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগের প্রকৃতি সম্পর্কেও বিভ্রান্তি রয়েছে, কারণ সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহ নিজে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনো লিখিত আপত্তি দেননি। এ কারনে বিষয়টি রহস্যজনক অবস্থায় প্রবেশ করেছে। নির্বাচনী কমিশন অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে আন্তরিক হয়নি; শুনানিতে আপত্তিকারী উপস্থিত না থাকায় কমিশন জানিয়ে দেয়, তামিমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগThey শেভর্য্য মনে করেনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসেইন বলেছেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি, তবে শুনানিতে যারা উপস্থিত ছিলেন না, তাদের বক্তব্যের গুরুত্ব নেই।’ এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ইস্যু হিসেবে দেখা দিয়েছে বেশ কয়েকটি ক্লাবের বাদ পড়া। দুদকের পর্যবেক্ষণের কারণে ভোটার তালিকা থেকে সরানো হয়েছে তাদের মধ্যে কিছু ক্লাব। ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমির প্রতিনিধি ইফতেখার রহমান মিঠু প্রশ্ন করেছেন, এই সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হলো, সে ব্যাপারে বোর্ডের অনুমোদন বা স্বাক্ষরের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে, এই সিদ্ধান্তে গোপন চাপ বা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে। তামিম ইকবাল নিজেও সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পরিস্থিতি খুবই কঠিন, তার কাউন্সিলরশিপও বাতিল হতে পারে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এতদিন এই ক্লাবগুলো নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, অথচ এখন তাদের বাদ দেওয়া হলো কেন? তিনি মনে করেন, এর পেছনের মূল উদ্দেশ্য হলো এক পক্ষকে দুর্বল করে দেওয়া।” তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সাবেক ক্রিকেটার’ বলতে আসলে কারা বোঝায়? গত পাঁচ মাসে তারা কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলা হয়নি, তবুও তাদের সাবেক বলে গণ্য করা হচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে এমন ডিফিনেশন করা হচ্ছে, সেটার ব্যাখ্যা চেয়েছেন তামিম। তার মতে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এভাবে নোংরামি চালিয়ে গেলে ভবিষ্যতে এর গভীর দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হবে, যা দেশের ক্রিকেটের জন্য হুমকি। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, হার-জিত বড় কিছু নয়, মূল বিষয় হচ্ছে ইগো বা স্বার্থের তৃপ্তির জন্য খেলাটি কলুষিত করা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, কারো পক্ষে কথা বলার প্রয়োজন নেই; সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে থাকাই যথেষ্ট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছেন, তারা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। প্রথমবারের মতো বোর্ডের বাইরের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তারা নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। তবে, সংবাদমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এই স্বাধীনতা কতটা বাস্তবায়িত, বা কি রকম নিছক প্রদর্শনী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিসিবির এই নির্বাচন বিতর্কিত পরিস্থিতি কেবল ক্রীড়া প্রশাসনের পারস্পরিক প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি এক বৃহত্তর নৈতিক ও পাঠ্যবিষয়ের প্রশ্ন। রহস্যময় অভিযোগ, ক্লাব বাদ দেওয়ার ব্যাপার, সাবেক ক্রিকেটারের ঘোষণা ও পরিচিতি, সব মিলিয়ে গঠন হতে থাকা এ চিত্রটি ফুটিয়ে তোলে এক ধরনের অস্বচ্ছতা ও অপ্রকাশ্য গোপন রাজনীতির দিকে। তামিম ইকবালের বক্তব্য সেই অস্বচ্ছতার বিপক্ষে এক প্রতিবাদ। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেবল ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং কিছু ইচ্ছা পূরণ করতে কি ৩০০ জন ক্রিকেটারের জীবন ও ক্যারিয়ার খেলা হয়ে যাচ্ছে? এই মুহূর্তের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৬ অক্টোবরের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসেইন জানান, মোট ৩৮টি আপত্তি তারা পেয়েছেন যারা; তার মধ্যে ৩০টি ঠাণ্ডা ক্যাটাগরিতে জমা দেওয়া হয়েছে এবং আটটি ই-মেইলে। আপত্তির শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না আট জন। আজ বিকাল সাড়ে চারটার মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আপাতত সবাইকে অনুরোধ করেছেন, সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে, কারণ ফলাফল যেন কিছু সচেতনতা সঙ্গে আসে।