ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ২০ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন, যা ইতিমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দ্বারা সমর্থন পেয়েছে। এই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে একটি সামরিক ও মানবিক সমাধানে পৌঁছানোর নানা গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা, যা গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউস থেকে এ পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়, যেখানে বলা হয় যে, এই প্রস্তাব সফল হলে, দুই পক্ষের সম্মতিতে যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে, গাজায় বন্দি থাকা ব্যক্তিদের মরদেহ ৭২ ঘণ্টার ভিতর ফেরত পাঠানো হবে, ও বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এছাড়াও, গাজা অস্থায়ীভাবে একটি অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে, যাতে হামাসের কোনও ভূমিকা থাকবে না। ইসরায়েল গাজার সম্পূর্ণ অখণ্ডতা বা অধিগ্রহণের কোনও পরিকল্পনা নেই।
ইতিমধ্যে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ সমর্থন থাকলেও, হামাস এই পরিকল্পনা পণ্যটি এখনও স্বীকৃতি দেয়নি। তাদের সহযোগী মাহমুদ মারদাউই জানিয়েছেন, তারা এখনও ট্রাম্পের লিখিত কোনও প্রস্তাব পাননি।
প্রস্তাবের মূল বিষয়বস্তু হলো:
১. গাজা হবে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা, যা আশপাশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে না।
২. গাজার জনগণের দুর্দশা ও ক্ষতিপূরণে পুনর্গঠনমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।
৩. দুই পক্ষ সম্মত হলে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী সীমান্তে প্রত্যাহার করবে।
৪. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল সব বন্দি ও মরদেহ ফিরিয়ে দেবে।
৫. বন্দি মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন বন্দিসহ ১,৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যারা ২০২৩ সালের অক্টোবরের পরে আটক হয়েছে।
৬. হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে, তাদের ক্ষমা করা হবে ও নিরাপদে তাদের গন্তব্যে যেতে দেওয়া হবে।
৭. গাজায় তাত্ক্ষণিক মানবিক সাহায্য পাঠানো হবে, যেখানে অবকাঠামো, হাসপাতাল ও রাস্তা পুনর্গঠন করা হবে।
৮. আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মানবিক সহায়তা চলবে, রাফাহ ক্রসিং খোলা থাকবে।
৯. গাজা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে, যার নজরদারি করবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক ‘পিস বোর্ড’, যেখানে ট্রাম্প নেতৃত্ব দেবে।
১০. গাজার পুনর্গঠনে বিশেষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও অঞ্চল গঠনের কথা বলা হয়েছে।
১১. গাজা থেকে কাউকে জোরপূর্বক সরানো হবে না, এবং ইচ্ছামত যেতে-আসার অধিকার থাকবে।
১২. হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসনে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অংশ নেবে না; সব সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস ও অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করা হবে।
১৩. আঞ্চলিক অংশীদাররা নিশ্চিত করবে যে, এই গোষ্ঠীগুলো প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে না।
১৪. আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী বা আইএসএফ গাজায় মোতায়েন হবে, গাজার পুলিশ ও নিরাপত্তা কাঠামোকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে।
১৫. ইসরায়েল গাজা দখল বা অধিগ্রহণ করবে না, সেনারা ধাপে ধাপে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।
১৬. যদি হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বা বিলম্ব করে, তবে তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা চালু থাকবে।
১৭. ধর্মীয় সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১৮. এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার পথে সহায়তা দেওয়া হবে।
১৯. যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদাররা সংলাপ ও সমঝোতা বাড়ানোর জন্য কাজ করবে। এই পরিকল্পনা যদি সফল হয়, তাহলে গাজায় স্থায়ী শান্তি নিশ্চিৎ হওয়া সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।