সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে যা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই বাস্তবায়ন করা হবে। এই নতুন খসড়া প্রবেশ করাবে চলমান অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে, এবং পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের অপেক্ষা করা হবে না। অর্থমন্ত্রী এর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের মধ্যেই নিশ্চিত করা হবে।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যদি নতুন পে স্কেল আগামী মার্চ বা এপ্রিলে কার্যকর করা হয়, তবে বাজেট সংশোধনের মাধ্যমে এর জন্য অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে। অর্থবছরের মাঝামাঝি ডিসেম্বরে বাজেট সংশোধন চলাকালে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।
২০১৫ সালে ড. ফরাসউদ্দিন কমিশনের পর এবারও নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের জন্য একটি পে কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেওয়া হবে। একজন কমিশন সদস্য বলেন, উচ্চতম ও সর্বনিম্ন গ্রেডের মধ্যে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে বর্তমানে অনুপাত ১০:১, যা নতুন কাঠামোতেও থাকবে, সম্ভবত ৮:১ থেকে ১০:১ এর মধ্যে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো বাংলাদেশে এরকম অনুপাত প্রচলিত।
চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বর্তমানে একজন কর্মচারী মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান, যা এখনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি অবসরোত্তর সময়ের জন্যও অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তদ্ব্যতীত, সন্তানদের শিক্ষা ভাতাও বাড়ানোর সুপারিশ থাকবে।
২০১৫ সালের ফরাসউদ্দিন কমিশনের মতো এবারও সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে সহজ করার প্রস্তাব আসতে পারে। বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী জাতীয় বেতনতন্ত্রের আওতায় আছেন, তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগ নিজেদের কাঠামো ভিন্ন। কমিশন বলেছে, এগুলোকে আরও closely জাতীয় কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
নতুন বেতন কাঠামো বেসরকারি খাতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে—এমন আশঙ্কা এড়াতে কমিশন অক্টোবর মাসে ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। ইতোমধ্যে সরকার বিভিন্ন খাতে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে, যেখানে নতুন প্রস্তাব অনুসারে এসব খাতের মজুরি সরকারি কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে।
বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন প্রণোদনা ভাতা প্রস্তাব করা হচ্ছে। কারণ, এই খাতে তরুণ সমাজের আগ্রহ কমে যাওয়ায় উদ্ভাবনমূলক কাজ অসহায় হয়ে পড়ছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মেধাবী তরুণদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্য রয়েছে।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পান। দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী এবং এর সাথে যুক্ত সশস্ত্র বাহিনী, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মিলিয়ে মোট সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ।
অন্তর্বর্তী সরকার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রথম এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১০ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা আগের বছর থেকেই বেশি।