গাজা উপকূলের জলসীমায় গ্রেটা থানবার্গসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আন্দোলনকারীর বহর থাকা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজগুলোকে অবরোধ ও হামলার মুখে ফেলেছে ইসরায়েলি সেনারা। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা অবরোধের এই নৌ-মিশনে থাকা বেশ কয়েকজন কর্মী, যার মধ্যে সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতা গ্রেটা থানবার্গও রয়েছেন, তাদের সকলকেই নিরাপদে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদের বলেছে, সবাই সুস্থ এবং শান্তিপূর্ণভাবে দেশে ফিরছেন। এপ্রসঙ্গে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ‘ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া’ শুরু করা হবে, অর্থাৎ ইউরোপে ফিরে যেতে বাধ্য করা হবে।
গত রাত থেকেই ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা বিশ্বের বিভিন্ন ডজনেরও বেশি নৌযান থেকে অন্তত ২১টি নৌকা আটক করেছে। এগুলো মূলত গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জাহাজ। এই অভিযানের সময় ফ্লোটিলার বেশ কিছু জাহাজের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং আক্রমণের মাধ্যমে তাদের আটক করা হয়।
অন্যদিকে, রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজার জলসীমায় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটিমাত্র জাহাজ সফলভাবে প্রবেশ করেছে। সেই জাহাজের নাম মিকেনো, যা বর্তমানে গাজার আকাশ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের হাতে এসেছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার থেকে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক কর্মী-আন্দোলনকারীকে আটক করেছে ইসরায়েল। এই বহরটি মূলত গাজা হত্যার অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য এসেছে, যেখানে দুই শতাধিকের বেশি সংগঠনের সদস্যের পাশাপাশি ৪০টিরও বেশি জাহাজ ছিল।
ফ্লোটিলার দল জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসন সত্ত্বেও তারা তাদের এই মানবিক মিশন চালিয়ে যাবেন। গাজার দিকে এগিয়ে চলা কমপক্ষে ৩০টি জাহাজের মধ্যে বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জলসীমার কাছাকাছি রয়েছে। তারা দৃঢ়ভাবে বলছে, অবৈধ বাধা সত্ত্বেও গাজার অবরোধ ভেঙে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর their পরিকল্পনা চালিয়ে যাবেন এবং এ জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সংগঠনের মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক ইনস্টাগ্রামে এক বার্তায় জানিয়েছেন, ‘গাজা লক্ষ্য করে যাত্রা করা এই নৌবহর থেকে ৩৭ দেশের দুই শতাধিক কর্মীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।’ তিনি জানান, আটক হওয়া জাহাজগুলোতে ছিলেন স্পেনের ৩০ জন, ইতালির ২২ জন, তুরস্কের ২১ জন এবং মালয়েশিয়ার ১২ জনসহ অন্যান্য দেশের বেশ কিছু কর্মী। বাংলাদেশ থেকে এই বহরে রয়েছেন শহিদুল আলম ও তার সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রুহি আক্তার রুহি।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অন্য সদস্যরা বলছেন, ইসরায়েলের বাধা তাদের এই মানবিক অভিযান ঠেকাতে পারবে না। তারা গাজায় পৌঁছানোর জন্য জোরদার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন, গাজা উপকূলে মাত্র ৮৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছেন। এই জাহাজগুলো মানবিক সহায়তা, খাবার, ওষুধ এবং জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম নিয়ে গাজায় পৌঁছানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
অবশ্যই, ইসরায়েল বলছে, তারা গাজা প্রবেশের এই নৌচলাচলকে ‘আইনসঙ্গত অবরোধ ভাঙার চেষ্টা’ হিসেবে দেখছে। তবে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলে, মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ। নিরাপত্তা বিবেচনায় ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার চালানো হচ্ছে, যাতে এই অভিযান এবং তাদের চলাচল স্পষ্টভাবে দেখানো যায়।