সিলেট ৩ আসনটি বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিএনপির জন্য এই আসনটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এখানেই রয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুরালয়। এর আগে এই আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন শফি আহমদ চৌধুরী। তবে ২০২১ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণে তিনি বহিষ্কার হন। বর্তমানে এই আসনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তিনজন নেতা জোর আলোচনা হচ্ছেন। তারা হলেন: বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক এবং সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
এই তিন নেতা ভবিষ্যতের নির্বাচনে সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। তারা ইতিমধ্যেই মাঠে কাজ শুরু করেছেন। নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
দলীয় সূত্র মতে, ২০০৮ সাল থেকে এই আসনের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন ব্যারিস্টার এম এ সালাম ও আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। ২০০৮ সালে প্রথম দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন শফি আহমদ চৌধুরী। তখনই তিনি এই আসনের প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে, ২০০৮ সালে মনোনয়ন না পেলে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ফুটবল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন এবং বিএনপির থেকে বহিষ্কৃত হন।
আর ২০১৮ সালে, বিএনপি এই আসনটিতে শফি আহমদ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার এম এ সালামকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করেছিল। তবে শেষ পর্যায়ে শফি আহমদ চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, এম এ সালাম মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।
বর্তমানে এই আসনের নির্বাচনী মাঠে একজন নতুন চরিত্রও আছেন—লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। তিনি গত ১৭ অক্টোবর দেশে ফিরে আসেন এবং তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।
তিন জনের পাশাপাশি আরও কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী এই আসনে নিজেদের পক্ষে গণপ্রচার চালাচ্ছেন। ব্যারিস্টার এম এ সালাম, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল ও স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তার স্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত বিবি ট্রাস্টের মাধ্যমে ঘর ও ভিত্তি নির্মাণ, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সহ নানা ধরনের জনসেবা চালানো হয়। রমজানে বিভিন্ন উপজেলার ওয়ার্ড পর্যায়েও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। ঈদের সময়েও পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
এছাড়া, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণে ব্যস্ত। তারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করছেন।
এখনো তারা নিজ নিজ কর্মসূচিতে সরব, বিশেষ করে দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলাগুলোতে কর্মসূচির বিস্তার বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রার্থীরা তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও সমর্থন অর্জন করতে পারছেন।
ব্যারিস্টার এম এ সালাম তার হৃদ্যতা ও সংগঠনী দক্ষতার জন্য পরিচিত। তিনি শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও যুবউন্নয়নসহ সমাজসেবায় ধারাবাহিক কাজ করছেন। যদি তিনি নির্বাচিত হন, তাহলে সিলেট-৩ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলেও দাবি তাদের।
অন্যদিকে, এম এ মালিকের সমর্থকরা মনে করেন, তিনি বহুদিন ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত। তার নির্বাচিত হলে, দলীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কৌশলে কাজ করে এলাকার উন্নয়ন সম্ভব হবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরীর সমর্থকেরা বলছেন, তিনি দলের নেতা হিসেবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য। ২০১১ সালে বিএনপির জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর, অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের এপিএস হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে এই এলাকার উন্নয়ন আশা করছেন তারা।
সুতরাং, আসন্ন নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনটি কেমন হবে, তা দেখার জন্য উত্তেজনা এবং আগ্রহ বেড়ে চলছে।