বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্য ২৭ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এই সংস্থাটি ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশে ক্ষমতার দীর্ঘ সময় ধরে চলমান গুম ও গ্রেপ্তারের ঘটনা বন্ধ হয়নি।
৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় এই উন্নয়ন হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এই সংস্থাটি বাংলাদেশে গুমের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল, কিন্তু এবার তারা বলছে, অগ্রগতি হয়েছে।
তবে, এইচআরডব্লিউ সতর্ক করে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনও মারাত্মক। তারা উল্লেখ করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এই ধরনের ঘটনা এখনও ঘটছে, যা ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আলামত।
এশিয়া অঞ্চলের এই সংস্থার উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলির লেখা প্রতিবেদনের শিরোনাম হয়েছে—‘ন্যায়বিচারের পথে এক ধাপ এগোল বাংলাদেশ’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে প্রকাশিত তাদের অপর প্রতিবেদনকে অস্বাভাবিকভাবে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, যিনি বলেছিলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিরা অধিকাংশই অপরাধী বা ঋণখেলাপি।
প্রতিবেদনটি আরও জানিয়েছে, ওই সময় সাংবাদিক তদন্তের দাবিতে জোর অবস্থানে থাকলেও সরকার কোনো তদন্ত করতে রাজি হয়নি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কর্তৃত্ববাদী নীতির মাধ্যমে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ২০২৪ সালে তীব্র আন্দোলনের মধ্যে সরকার পতনের পর অনেক নেতা-কর্মী দেশ থেকে পালিয়ে যান।
অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নতুন সরকার গঠন করে তদন্ত কমিশন, যেখানে প্রায় ১৮৫০টি অভিযোগ জমা পড়ে। তদন্তে দেখা যায়, তিন শতাধিক ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। সম্প্রতি এই তদন্ত সংস্থা ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে এই নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, অবশেষে ২০২৪ সালে এইচআরডব্লিউ উদ্যোগ নিয়ে গুমের ঘটনা দেশের আদালত পর্যন্ত নিয়ে যায়। দুইটি মামলার শেষে গতকাল, বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও সেনা কর্মকর্তাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগের প্রতিরক্ষায় ওই সময় তার উপস্থিতি ছিল—মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমান—যতদিন আগে ২০১৬ সালে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে জানা যায়, তাকে এক গোপন সামরিক কেন্দ্রে আট বছর ধরে আটক রাখা হয়েছিল। জানানো হয়েছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি মুক্তি পান।
প্রতিবেদনে মীনাক্ষী গাঙ্গুলির মন্তব্য, মানবাধিকারকর্মীরা প্রতীক্ষা করে থাকেন সেই দিনটির জন্য যখন দেশের বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানগতভাবে এগিয়ে আসবে। তবে, সেই সময় এখনও অনেক ঘটনা অজানা ও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তাদের আশা, দেশের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, আর দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
এই খবর শেষ করে তিনি লিখেছেন, অদেখা এই দিনগুলোতে আমরা অপেক্ষা করি সেই স্পর্শকাতর মুহূর্তের জন্য, যখন সত্যের মুখোমুখি হতে পারবে সকল ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ের।