ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলছে নিরস্ত্রির পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল তিন হাজার সাতশো ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মুক্তির খবর সোমবার একটি সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় কারাগার বিভাগ জানিয়েছে, এই বন্দিদের মুক্তি দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে অবস্থিত ইসরায়েলের মালিকানাধীন ‘ওফের’ কারাগার থেকে প্রায় ২০০০ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই সময়কার ছবি হলো, বন্দিদের জন্য আইসিআরসি (ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রস) সরবরাহ করা বাসে করে পশ্চিম তীরের বেইতুনিয়া শহরে পৌঁছানোর দৃশ্য। এই শহরে অপেক্ষমাণ অনেক ফিলিস্তিনি স্বজন তাদের স্বজনদের স্বাগত জানান। অপরদিকে, দ্বিতীয় পর্যায়ে গাজা শহরের খান ইউনিসে থাকা ১৭১৮ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁরা দক্ষিণের নাগেভ কারাগার থেকে গাজায় এসে পৌঁছেছেন। গাজার চিকিৎসাকেন্দ্র নাসার মেডিকেল কমপ্লেক্সে প্রথমে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এদিকে এই মুক্তির নেপথ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানের ঘটনা। ওই সময় জাদুঘরে গ্রেপ্তার করা হয় অনেক ফিলিস্তিনিকে, যাদের মধ্যে ২৫০ জনের মতই যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ছিল। এই বন্দিদের মুক্তির জন্য গাজায় জড়ো হয় শত শত সাধারণ মানুষ। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনী একটি অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার হামাস যোদ্ধা অভিযান শুরু করে। এই হামলায় এক হাজার দুইশ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়ে পড়ে। এই হামলার পর থেকে দুই বছর ধরে গাজায় ব্যাপক সেনাসংঘাটন চালানো হয়। এর ফলে প্রান গেছে প্রায় ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনির আর আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে অস্ত্রবিরতি ও জিম্মি মুক্তির জন্য নানা আলোচনা ও চেষ্টার মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধবিরতি আওতায় এসেছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পরে কিছু বন্দিকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে শুরু হয় আবার কারা বিনিময়। তবে হামাসের হাতে বর্তমানে মোট ২০ জনের মতো জিম্মি থাকলেও এর মধ্যে সবাই জীবিত রয়েছে বলে তারা জানায়। ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা পেশ করেন। এই পরিকল্পনায় সম্মত হয় ইসরায়েল ও হামাস। এর ফলে গত শুক্রবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এই যুদ্ধবিরতির সময়ই হামাস অবশেষে খালি করে দেয় সব জিম্মিকে, এবং এর বিনিময়ে ইসরায়েল মুক্তি দেয় ৩৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে। এদের মধ্যে কেউ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নয়। ইসরায়েল আগেই জানিয়ে দেয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারও মুক্তি হবে না। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।