বাংলাদেশের ব্যাটিং অধিনায়করা মিরপুরের ঘূর্ণি পিচে খুব বেশি পুঁজি সঞ্চয় করতে পারেননি, মাত্র ২০৭ রান করে তারা ইনিংস শেষ করে। তবে এই পিচে বলের অসাধারণ গতি এবং স্পিনের ধার ছিল, যা শেকড়ে টানতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রিশাদ হোসেন তার দুর্দান্ত স্পিন দিয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের ওপর বলের চূর্ণবিচূর্ণ ভংগি চালান। তিনি একাই ৬ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের উত্তরপুরুষরা ২০৮ রান লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিং শুরু করে, কিন্তু তাদের ইনিংস খুব দ্রুত শেষ হয় ৩৯ ওভারে ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায়। মিরপুরের এই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ ৭৪ রনের এক দুর্দান্ত জয় উপভোগ করে।
খেলায় শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনাররা ভালো শুরু করে, ব্রেন্ডন কিং এবং অলিক আথানাজে দুজন মিলে ৫১ রান যোগ করেন। কিন্তু ১২তম ওভারে রিশাদ হোসেন আথানাজেকে এলবিডব্লিউ করে প্রথম উইকেট তুলে নেন। এরপর ক্রিজে আসা কিয়েসি কার্টি প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, যদিও রিশাদের ঘূর্ণি বলের কাছে টিকতে পারেননি। স্লিপে সাইফ হাসান তাকে ক্যাচ করে ফেরত পাঠান, তিনি ৩০ বলের মোকাবেলায় করেন ৯ রান।
তারপর রিশাদ আরও জোরে বল চালান। ২২তম ওভারেই তিনি দুইটি শিকার করেন, প্রথমে ব্রেন্ডন কিংকে ৬৬ বলের মোকাবেলায় ৪৪ রান করে ফিরিয়ে দেন। এরপর শেরফান রাদারফোর্ডকে শূন্য করে দেওয়ার পাশাপাশি উইকেটরক্ষক সোহানও দুর্দান্ত দুটি ক্যাচ নেন। এর ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল ৭৯ থেকে ৮২ রান এ এসে ৩ উইকেট হারিয়ে বিশাল ধাক্কা খায়।
রিশাদের পঞ্চম শিকার হন রস্টন চেজ, যা তার ক্যারিয়ারে প্রথম ফাইফার। অন্যদিকে মিরাজ উড়িয়ে দেন গুদাকেশ মোতিকে এলবিডব্লিউ করে। ক্যারিবীয়রা ১০০ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে। শেষ ভরসা হিসেবে শাই হোপও ব্যর্থ হন তানভীর ইসলাম দ্বারা, তিনি ১৫ করে আউট হন।
অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হয় ১৩৩ রানে, যা ৩৯ ওভারে গুটিয়ে যায়। রিশাদ হোসেন ৩৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন, মোস্তাফিজুর রহমান ২টি, অন্যদিকে মেহেদী মিরাজ ও তানভীর ইসলাম একেকটি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিংও শুরুতে ঝামেলা সৃষ্টি করে। তারা ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে প্রথম দিকেই অষ্টবিশিষ্ট হয়ে পড়ে। ওপেনার সৌম্যসরকারকে স্পষ্ট এলবিডব্লিউ করে দেন রোমারিও শেফার্ড, যা রিভিউ না নেয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছায় দল। এরপর জেডেন সিলসের ক্যাচ দিয়ে ৪ রানে সাজঘরে ফেরেন।
তৃতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় প্রতিষ্ঠিত ব্যাটিং শুরু করেন, তবে ধীরগতির কারণে সফলতা একটু দেরি হয়। ৭১ রানের মধ্যে তারা ১২০ বল খেলেছেন। শান্ত ৩২ রান করে এলবিডব্লিউ হন। এরপর হৃদয় দলের অর্ধশত ছুঁই ছুঁই করেন, তবে ৫১ রানে আউট হন, দ্রুতই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের দৌড়।
অভিষিক্ত অঙ্কন অহমের প্রথম ফিফটির জন্য আক্ষেপ, যখন বড় শট মারতে গিয়ে বোল্ড হন। বাংলাদেশের শেষ দিকে কিছু ছোট ছোট পার্টনারশিপ হয়, কিন্তু ৭৬ বল খেলে তিনি ৪৬ রান করে শেষ করেন। দলের সংগ্রহ ১৬৫/৬ উইকেটে দাঁড়ায়।
নুরুল হাসান সোহান ১০ বলে ৯ রান করেন, রিশাদ হোসেন ১২ বলে ২৬ রান করে দলের জন্য সহায়তা করেন। অন্যদিকে তানভীর ইসলাম ৪ বলে ৯ রান যোগ করেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেডেন সিলস ৩টি উইকেট নেন, রস্টন চেজ ও জাস্টিন গ্রেভস প্রত্যেকটি ২টি করে উইকেট তুলে নেন। এই জয়ে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আইসিটি উত্তেজনাপূর্ণ ক্রিকেট প্রদর্শন করে।