নওগাঁর বদলগাছীতে দগদগে ঘা নিয়ে অসুস্থ কুকুরের অবাধ হাঁটাচলা sudah শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী বেশ আতঙ্কিত। তবে দুর্ভাগ্যবশত, প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনও চোখে পড়েনি। বিভিন্ন স্থান যেমন উপজেলা পরিষদ চত্বর, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, থানার মোড় এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে অসুস্থ এই কুকুরগুলো ঘুরাফেরা করছে। এই কুকুরের উপস্থিতিতে বিশেষ করে ছোটবয়সী শিক্ষার্থীরা রাস্তায় চলাচল এবং স্কুলে আসা যাওয়ার সময় ব্যাপক দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন। শরীরের দগদগে ঘা থেকে মাংসে পচন ধরতে শুরু করেছে, যার কটু দুর্গন্ধ সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অসুস্থ কুকুরগুলো কখনো টয়লেটে ঢুকে পড়ছে, আবার কখনো শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করছে। এই পরিস্থিতি শিশুদের জন্য একদিকে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। অসুস্থ কুকুরের কারণে পরিবেশের গন্ধ অস্থির, আর কুকুরগুলোর কামড়ানোর ভয়ে শিশুরা ভীত হয়ে পড়ছে।
এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুবার জানানো হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের তরফ থেকে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। বিশেষ করে দগদগে ঘা ও পচনধরা অংশের মাছিরও দেখা মিলছে, যা আশেপাশের দোকানের খাবারে এসে পড়ছে, এই পরিস্থিতি স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।
জানা গেছে, ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস মূলত কুকুরের প্রজননের সময়। এই সময় কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং প্রজননের সময় তারা অধিক আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। দুই বা তিনটি একসাথে মুখোমুখি হলে তাদের মধ্যে কামড়াকামড়ি শুরু হয়, যা ঘা সৃষ্টি করে। চিকিৎসা না করলে এই ঘা পচে যায় এবং কামড়ের ফলে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। বিশেষ করে এই মৌসুমে কুকুররা খুবই বিষাক্ত হয়ে মানুষের প্রতি আক্রমণ করতে পারে। মানুষের জন্য এ সময়টা যথেষ্ট ভীতিপূর্ণ, কারণ তারা শুধু নয়, ফেলে আসা ভয়ও থাকে যে জলাতঙ্কের সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকাবাসী স্বাস্থ্যের উপর বিষণ্ণতা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কখনোই এই উপজেলা শহরে কুকুরদের জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়নি। অসুস্থ কুকুরের কামড়লে জলাতঙ্ক হওয়ার ঝুঁকি মারাত্মক। এছাড়া, কুকুরদের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে যে ভ্যাকসিন থাকা দরকার, তা זמনাতেও পাওয়া যায় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের টিকা সরবরাহও খুবই স্বল্প। পূর্বের মতো এ ধরনের পরিস্থিতি থাকলে, সম্ভবত কুকুর নিধন কর্মসূচি অনেকটাই কার্যকরী হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, “সদর এলাকার কিছু ব্যক্তি আমাদের অবগত করেছেন, আমরা কিছু কুকুরের চিকিৎসা করেছি। তবে রাস্তার কুকুরের জন্য এই ধরনের চিকিৎসা বিপজ্জনক, কারণ এদের মধ্যে জলাতঙ্কের পরীক্ষা বা টিকা দেয়া সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের জলাতঙ্কের টিকা বর্তমানে প্রাপ্য নয়, তবে যদি প্রশাসন পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করে, তাহলে আমরা সেবা দিতে প্রস্তুত।”
বদলগাছী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রিপা রানী বললেন, “এখনো কুকুর নিধনের কোনও নির্দেশনা নেই। তবে যদি কেউ অসুস্থ কুকুর আমাদের কাছে নিয়ে আসে, তাহলে আমরা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করার চেষ্টা করি।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিস ফারহানা জানিয়েছেন, “এখনো র্যাবিসের কোনও টিকা আমাদের কাছে নেই।” বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিকল্পনাও জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার ছয় বছরের ক্যারিয়ারে কখনো এই পরিস্থিতি দেখিনি।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান ছনি বলেন, “কুকুর নিধন বিষয়টা অবশ্যই নোংরা মনে হয়, তবে অসুস্থ কুকুরের চিকিৎসা ও জলাতঙ্কের টিকার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবো।” তিনি আরও আশ্বাস দিয়ে বলেন, “মানুষের জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনের যথেষ্ট সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা সচেষ্ট থাকবো।”