দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু উদ্যোগের মধ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে দেখা যাচ্ছে। গোপন করে রাখা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একধাপ সামনে এগিয়ে এসেছে, যা আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রশংসা লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে এবং সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তবে, আইএমএফের প্রতিনিধিরা দেশের অর্থনীতির অন্যান্য দিকেও গভীরভাবে নজর দিয়েছেন। তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন এবং অন্য পুনঃঅর্থায়ন ও প্রাক-অর্থায়ন সুবিধাগুলির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যেখানে নেতৃত্বে ছিলেন আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্তাবলী অনুযায়ী, সরকারের কাছ থেকে অর্জিত খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে আনতে হবে। কিন্তু গত বছরের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর গোপন খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশিত হতে শুরু করে। এই বছরের জুন শেষের হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বেশি। বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ৪০ শতাংশের বেশি এবং বেসরকারি ব্যাংকেও এর হার ১০ শতাংশের ওপরে পৌঁছেছে।
আইএমএফের দল এই বৈঠকে মুদ্রানীতির কাঠামো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, তারল্যব্যবস্থা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। মূল্যস্ফীতি কমাতে দেশের প্রশংসা করলেও সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে দীর্ঘমেয়াদে সংকোচনমূলক নীতির কারণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া, তারা রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি, ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট, প্রভিশন ঘাটতি, পুনঃমূলধন, বৈদেশিক মুদ্রার পরিস্থিতি ও সবুজ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কেও জেনে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, “আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন নিয়মিত দৌড়াচ্ছে। তারা ঋণের শর্তাবলী কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তা জানার জন্য তথ্য নিচ্ছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, তারল্য সহযোগিতা, রিজার্ভের ব্যবহার ও খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপের ওপর তারা গুরুত্ব দিয়েছে।”
	    	

















