দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবনের পর অবশেষে শিগগিরই দেশে ফিরতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি ঢোকার পর রাজধানীর গুলশান-২ এর এভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে থাকবেন। ইতিমধ্যে বাড়িটি তার জন্য উপযোগী করে পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে, তারা বলছে, তিনি খুব শিগগিরই ফিরে আসবেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি সহসাই ফিরে আসছেন। বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একজন জানিয়েছেন, তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনাই করছেন и খুব দ্রুতই দেশে ফিরবেন—ইনশাআল্লাহ।
বর্তমানে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে তারেক রহমানের ফেরার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এই সময়ের মধ্যে বা তার আগে কোনও সরকারি ঘোষণা আসলে তিনি দেশে ফিরে আসতে পারেন। তবে সবকিছু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে এবং তিনি নিজেই শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন কবে ফিরবেন।
কিছু দিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রকাশ্যে বলেছিলেন, নভেম্বরের শেষ দিকে তিনি দেশে ফিরবেন বলে তারা আশা করছেন। তবে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
আলোচনায় এসেছে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য এখন ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্ধারিত হয়েছে।
একই সঙ্গে দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেছেন, ডেমেক্রেটিক প্রসেসের অগ্রগতির পর ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই তিনি দেশে ফিরবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান জানিয়েছেন, দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই বাড়িটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মালিকানা, যা সম্প্রতি তারেক রহমানের নামে রেজিস্ট্রিজ হয়েছে। বাড়িটির অভ্যন্তর ও বাহ্যিক পরিবেশ সবই তারেক রহমানের থাকার জন্য উপযুক্ত করে সাজানো হয়েছে। কাজের শেষ পর্যায়ে রয়েছে বাড়ির সাজসজ্জার কাজ এবং এখন এটি সম্পূর্ণ বাসযোগ্য।
অন্যদিকে, বিএনপির আরেকস্তরের নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, গুলশান এভিনিউয়ের এই বাড়িটির ভেতর-বাইরের সংস্কারকাজ এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। দেশের ফিরেই তিনি এখানে থাকবেন। বাড়ির পাশে খালেদা জিয়ার আবাসস্থল থাকায় এটি দলের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
১৯৮১ সালে মূলত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার তার জন্য এ বাড়িটি বরাদ্দ করেছিলেন। দীর্ঘ দিন এটি খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিল, তবে নাম জারি হয়নি। কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকার বাড়ির নামজারির কাগজপত্র তার হাতে তুলে দেয়। বাড়িটিতে তিনটি বেডরুম, ড্রয়িংরুম, ডাইনিং, লিভিং রুম, সুইমিংপুলসহ আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে।
সম্প্রতি, ছয় মাস আগে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের সিও বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার পর সেটি তারেক রহমানের জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাড়িটিকে আরামদায়ক ও আধুনিক করে তুলতে সব প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ হয়েছে।
এরই মধ্যে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান লন্ডন থেকে দেশে এসেছেন এবং বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি নিজের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, যাতে বাড়ির প্রস্তুতি অনুযায়ী তারেক রহমান দ্রুত ফিরে আসতে পারেন।
তারেক রহমান বয়স ৫৯ বছর। তিনি ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। ২০০৯ সালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ধীরে ধীরে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী হয়ে উঠেন। ২০১৮ সালে তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকার সময় তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি মূলত বিদেশ থেকে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন—অনলাইনে সভা, মিটিং ও সমাবেশে অংশ নিয়ে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে নানা মামলায় দণ্ড হয় এবং মোট ১০০টির বেশি মামলা হয় তার নামে। তবে, ২০২২ সালের আগস্টের পরে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা অনুপস্থিত।


















