বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারণ করেছেন। তিনি সোমবার (২৫ আগস্ট) কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এই মন্তব্য করেন। বুলু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তাঁর প্রিয় সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি চিরকুট পাঠান। চিঠিতে লেখা ছিল, “তুমি যেভাবে হোক তোমার দুটি নাবালক সন্তানকে পালিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাওয়া। ঢাকা বা দিনাজপুর যেখানে যাও, বেঁচে থাকলে দেখা হবে, দেশ স্বাধীন হলে দেখা হবে, না হলে ক্ষমা করে দেয়া হবে।” এই চিঠি পেয়ে বেগম জিয়া অনেক কষ্টে ঢাকা চলে আসেন, সিদ্ধেশ্বরীতে আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করেন। এর পর থেকেই তিনি সক্রিয় পন্থায় মুক্তিযুদ্ধের অংশ হন। পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২২ জুলাই তাকে, তার দুই সন্তানসহ গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। তিনি বন্দী থাকাকালীন এই ইতিহাসের অংশ ছিলেন। ফলে, তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম নারীন মুক্তিযোদ্ধা।
বুলু বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে বিএনপির বিকল্প নেই। যদি শহীদ জিয়াউর রহমান দল গঠন না করতেন, তাহলে বাংলাদেশের মানচিত্রই অনেক আগে বদলিতে চলে যেত। আজ যদি এ দেশের অর্থনীতি, স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাধীন জীবনযাত্রা বজায় রাখতে হয়, তাহলে বিএনপির বিকল্প কিছুই নেই। এই দলই একমাত্র যারা দেশের স্বার্থে নিশ্চয়তা দিতে পারে।
একই সঙ্গে তিনি জামায়াতের নিন্দা জানিয়ে বলেন, যারা ধর্ম ও হাদিসের কথা বলে, কিন্তু তাদের চরিত্র দেখেছেন সবাই। তারা ৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার বিরোধী ছিলেন। ইতিমধ্যে, তিনি দেখেছেন, অনেক নেতা-নেত্রীর আচার-আচরণ ও কার্যকলাপের রীতি সত্যিই দুঃখজনক। উদাহরণস্বরূপ, ৫ আগস্ট দিনটি উল্লেখ করে বুলু বলেন, ডাক্ত শফিক সাহেব বলেছিলেন, তিনি আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরার আব্দুল আকবর সোবহান হেলিকপ্টারে করে দেশে এসেছিলেন এবং শাসনের কথা বলেছিলেন।’
বুলু আরও বলেন, যারা জামায়াতে ইসলামীকে আশ্রয় দেন, তারা কেবল বান্দার লাভের জন্য উল্লেখ করছেন, কিন্তু তাতে বেহেশত পাওয়ার কথা বলছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘বেহেশত কোন মুসলমানের অহংকার নয়। এটি আল্লাহর সিদ্ধান্ত।’
বিশ্লেষণে বলেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে গঠিত সরকারই দেশের সব ঋণ শোধ করবে। তবে কিছু ধর্মান্ধসন্ধানী পাপের জন্য মাঠে নেমে গেছে, যারা প্রকৃতপক্ষে তৎপর নয়।
সম্মেলনে বক্তা ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদ। এটি উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা অহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্যসচিব সফিউল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর মাহমুদ ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা।
সম্মেলনের পর আরও নির্দেশনা দেওয়া হয়, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে বর্তমান আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সদস্যসচিব সফিউল আলম রায়হানের নাম ঘোষণা করা হয়।