বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী মন্তব্য করেছেন যে, কিছু রাজনৈতিক দল পিআর (প্ৰতিপক্ষের পরিচয় বা অনুমতি) চেষ্টা করছে যেন তা মামা বাড়ির আবদার। বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ গার্লস হাই স্কুল মাঠে এক কর্মসূচিতে অর্থের চেক ও অটোরিকশার চাবি বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য দেন। এই অনুষ্ঠানে জামালপুরের ২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা ও অটোরিকশা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সংগঠিত এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন নেতাকর্মীরা।
রিজভী বলেন, ‘রমজানের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘কিছু রাজনৈতিক দল পিআর নিয়ে মামা বাড়ির আবদার করছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ যে পদ্ধতিতে অভ্যস্ত, সেই পদ্ধতিতে তারা নির্বাচন চায় না।’ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সারাবিশ্বে ৪৫০টির বেশি বিএনপি নেতাকর্মী গত জুলাইয়ে নির্বাচনের সময় নিহত হয়েছেন। তবে কিছু দল মনে করে, সবকিছু তারা একাই করেছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘শেখ হাসিনা নির্বাচন দিতে চান না, আপনি চান না— এটা শেখ হাসিনারই সুর। শর্ত দিয়ে নির্বাচনে গেলে গণতন্ত্রের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না, উল্টো উগ্রপন্থার পুনরায় উত্থান হবে।’
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘বিদেশ থেকে বসে শেখ হাসিনা দেশের অর্থ লুট করে অসামাজিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টার করছে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বসে দিল্লির নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বিপজ্জনক কৌশল চালানো হচ্ছে।’ বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাভাষী মুসলমানদের জোরপূর্বক পুশ ইন করে শেখ হাসিনাকে ‘জামাই’ হিসেবে রেখেছে, যা দিল্লির এক ধরনের দ্বিচারিতা।’
তিনি বলেন, ‘বসন্তের কোকিলরা দলে দলে চাঁদাবাজি ও অপকর্মে লিপ্ত। তাদের এই প্রবেশ ঠেকাতে হবে। যারা জেল খেটেছেন বা নির্যাতিত নেতাকর্মী, তারা কখনও চাঁদাবাজ হবে না।’
রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে প্রথমত, মানুষের বেকারত্ব ও দরিদ্রতা বাড়ছে। আমরা যতই সাহায্য করি না কেন, দারিদ্র্য বাড়লে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে।’
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ, সাবেক সাংসদ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। সঞ্চালক ছিলেন দেওয়ানগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান সাজু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদ বিন আনোয়ার সজীব ও তৌফিকুর রহমান তৌফিক।
মিল্লাত বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। জনগণ এই প্রক্রিয়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চায়। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ শাসনামলে মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নির্বাচন নামের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তারা গলা টিপে হত্যা করেছে। তারা বাংলাদেশে মানুষের অধিকার হরণ করে নিজেদের স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিএনপি চায় একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। শহীদ জিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে বিশ্বকে দেখাতে চাই, আমরা পারি একটি নিরাপদ, উন্নত ও প্রগতিশীল দেশ গড়ে তুলতে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি। একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেছ আলী মামুন, আমরা বিএনপি পরিবারের সভাপতি আতিকুর রহমান রুমন, বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মানিক সওদাগরসহ আরও উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।