মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে টানা ১১ মাসের সংঘাতের ফলে গত বছর আগস্টে রাখাইনের নিকটস্থ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী শহর মংডু নিয়ন্ত্রণের হাতে যায় আরাকান আর্মি। তার পর থেকেই তারা বঙ্গোপসাগরের জলসীমা দিয়েও তৎপরতা বাড়ায়, যার ফলে অপহরণ এবং আতঙ্কের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মির দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা উল্লেখ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে, গত ২২ দিনে সাতটি ট্রলার ও ৫৬ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে এই গুপ্তচিত্ত সংগঠনটি।
স্থানীয় অধিবাসীরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আরাকান আর্মির তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীসহ অন্যান্য স্বশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে আরাকান আর্মি। এর ফলশ্রুতিতে সাগরে তাদের কার্যক্রম আরও বেড়েছে, যার কারণে জেলেরা মাছ ধরার সময় নানা ঝুঁকিতে পড়ছেন। তবে ধরে নেওয়া হচ্ছে, অপহৃত জেলেরা এখনও জীবিত না হয় মারা গেছেন, তা পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, রাখাইনের সেনা নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে নাফনদী ও সমুদ্রে তাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে প্রায়ই আটক হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা। চলতি মাসের ৫ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্টের মধ্যে সাতটি ট্রলার ও ৫৬ জন জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি। এই লাফিয়ে থাকা পরিস্থিতিতে, অপহৃত জেলেদের পরিবারের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করছে, কিন্তু এখনো কোন সাড়া পায়নি। পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তত কিছু পেজের মাধ্যমে আটককৃতদের ছবি প্রকাশ করেছে আরাকান আর্মি, যা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বন্দী অবস্থার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে যায়।
শাহ পরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়ার মারিয়া খাতুন বলছেন, ‘‘৫ আগস্ট আমার স্বামী মোহাম্মদ ইলিয়াস ও দুই সন্তান মাছ ধরতে নাফ নদীতে গিয়েছিলেন। কিছু সময় পরে শুনেছি, নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে অরণ্যেকজন ট্রলারসহ আরাকান আর্মি তাদের ধরে নিয়েছে। ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও তারা এখনও ফিরে আসেনি।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘আমাদের সংসার চালানোর একমাত্র মূল উপার্জন ছিল তারা। এখন স্বামী-সন্তান না থাকায় সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে।’’
একইভাবে, শাহ পরীরদ্বীপের মাঝের পাড়ার হাবিবা বেগম বলেন, ‘‘২৩ আগস্ট আরাকান আর্মি ১২ জন জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। আমার স্বামী মো. আমিনও তাদের মধ্যে রয়েছেন। এখনো কেউ ফিরতে পারেনি। আমাদের সংসারে তিন সন্তান, তারা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। পণ্য ও লেখাপড়ার জন্য তো বোকাবাজি লেগেই আছে।’’
ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাঝি বলেন, ‘‘আগস্ট মাসে আমাদের সাতটি ট্রলার ও ৫৬ জেলে অপহৃত হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কোস্টগার্ড, বিজিবি ও প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু আজো কেউ ফিরেনি। এ ঘটনার ফলে জেলেরা আতঙ্কিত, তারা সাগরে যেতে বিপজ্জনক মনে করছে।’’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা জানি, মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা মাঝেমাঝে আরাকান আর্মির দ্বারা আতঙ্কে আটক হচ্ছেন। বিশেষ করে আগস্টে ৫৬ জন জেলের অপহরণের ঘটনা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমাদের প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘শাহ পরীরদ্বীপ ও নাইক্ষ্যংদিয়ায় বারবার এই সমস্যা ফিরে আসছে। তাই জেলেদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল আরও জোরদার করেছে।’’