শুধু বাংলায় কথা বললেই কি একজন ব্যক্তি বাংলাদেশি বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে? এই প্রশ্নটি এখন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনায় ঝড় তোলে দিয়েছে। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে চরমভাবে ভর্ৎসনা করে বলেন, দেশের নিরাপত্তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভারতের মতো বহু ভাষাভাষী দেশের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণও অতি জরুরি। বিচারপতিরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শুধু ভাষা বা আঞ্চলিক পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে বিদেশি বা বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা উচিত নয়।
বিশেষ করে এই ঘটনা সামনে এসেছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর হয়রানি ও আক্রমণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস একাধিকবার এই অভিযোগ তুলেছেন, বাংলাভাষীদের ওপর হামলা ও তাদের বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’ অপপ্রচারের অভিযোগ উঠেছে। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলে, এই ধরনের বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।
সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি – সূর্যকান্ত, জয়মাল্য বাগচী ও বিএম পাঞ্চোলি –এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় আইনজীবীকে প্রশ্ন করে, ভাষার কারণে কি ভারতের মতো বহুভাষী দেশে কাউকে বাংলাদেশি বলে মনে করা সম্ভব? তারা আরও জিজ্ঞেস করেন, দেশের নাগরিকত্ব কিংবা দেশি-বিদেশি বিবেচনায় একজনের ভাষা গুরুত্বপূর্ণ কি না। বিচারপতি বাগচী কৌতূহlių সাথে বলেন, যদি ভাষা দেখে কাউকে বিদেশি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে কি বাংলাদেশি বা অন্য দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা যাবেনা?
আদালত এই প্রশ্নের জবাব খোঁজে যে, অনুপ্রবেশ বা অবৈধ অনুপ্রবেশের সমস্যা বিশ্বজুড়ে রয়েছে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘তাহলে কি বলে নেওয়া যায় যে, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো সীমান্তে যেমন প্রাচীর গড়ে তুলছে, তেমনই কেন্দ্র সরকারও সীমান্তে উঁচু প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে?’ এই মামলাটি এখন কলকাতা হাইকোর্টে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং দ্রুত শুনানির অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ বা অনুপ্রবেশের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা থেকে। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাভাষী শ্রমিকরা বিভিন্ন রাজ্যে আতঙ্কে রয়েছেন কারণ তারা এ কথা বলে উদ্বিগ্ন, তাদের বাংলাতেই অপরাধী মনে করে তাদের আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাদের সরাসরি বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’ করার ঘটনাও ঘটেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে আদালত কেন্দ্রীয় সরকার ও শ্রমিক সংগঠনকেও প্রশ্ন করে। তারা জানতে চায়, এই ধরনের ঘটনা যদি ঘটে থাকেআরও কেন সংশ্লিষ্ট পরিবার বা ব্যক্তিরা সরাসরি আদালতে না এসে সংগঠনের মাধ্যমে অভিযোগ দিচ্ছে? আদালত স্পষ্ট করে বলে, ভারত কখনোই অনুপ্রবেশকারীদের জন্য অপরাধীদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে না।
বিচারপতি বাগচী বলেন, দেশের নিরাপত্তা অবশ্যই লক্ষ্য থাকতে হবে, কিন্তু এই মামলার মূল বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। প্রথমত, শুধুমাত্র ভাষার জন্য কাউকে বিদেশি বা বাংলাদেশি বলা যায় না। দ্বিতীয়ত, সোনালী বিবির ঘটনা অত্যন্ত সংবেদনশীল ও নিন্মস্তরের সমস্যা।
গত ২২ আগস্ট অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি ও তার পরিবারের সদস্যদের বাংলদেশের পুলিশ চাঁপাইনবগঞ্জে হেফাজতে নেন। এরপর এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে ওঠে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে হবে বলে জানানো হয়েছে।