হাওর অঞ্চলের জটিল জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের বাস্তবতা তুলে ধরতে নতুন একটি শর্টফিল্ম নির্মিত হয়েছে, যার শিরোনাম ‘নাওবিবি’। এই বিশেষ সিনেমাটির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন জনপ্রিয় তরুণ লেখক শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ, যিনি রহস্য ও থ্রিলার ধারায় অধিক পরিচিত। সিনেমাটির পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা মশিউর রহমান কায়েস, এবং প্রযোজনা করেছেন ম্যাক রিপন।
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের নিকলী ও করিমগঞ্জের বিভিন্ন লোকেশনে এই শর্টফিল্মের দৃশ্যধারণ সম্পন্ন হয়েছে। ফিল্মে দেখানো হয়েছে, কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হাওর এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশকে বদলে দিচ্ছে।
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন মাহাফুজ মুন্না, যিনি এর আগে বড় পর্দার ‘উড়াল’ সিনেমায় তার অভিনয় প্রমাণ করেছেন। এর পাশাপাশি রহস্যময় তরুণীর ভূমিকায় দেখা যাবে ইসরাত জাহান পমিকে, যিনি মূলত গায়িকা হিসেবে বেশ প্রখ্যাত—দেশ-বিদেশে তার পরিচিতি রয়েছে। পমি প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন এই ফিকশনে।
শর্টফিল্মের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন আহমদ আমিন, সিনেমাটোগ্রাফিতে রয়েছেন আনন্দ সরকার। এছাড়াও, ‘ফেঁউচ্চা’ চরিত্রে দেখা যাবে শাহ শান্তকে, ও শিশু চরিত্রে অভিনয় করছেন শাহ ওবায়েদ নেহান।
নির্মাতা মশিউর রহমান কায়েস বলেন, “প্রথম থেকেই আমাদের একটি সুন্দর ও সমন্বিত টিম হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি হাওরের প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা এবং জলসংস্কৃতিকে একত্রে শিল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে। বর্তমানে পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ চলছে।”
অভিনেতা মাহাফুজ মুন্না জানান, “চিত্রনাট্য দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার বেশ ভালো লেগেছিল। গল্প ও চরিত্রের গভীরতা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। শুটিংয়ের কয়েকদিন আগে থেকেই আমি নিজেকে চরিত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম। গল্প, চরিত্র ও পরিবেশের জন্য আমি স্পেশালভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “এটি একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র, যেখানে দলবদ্ধভাবে কাজ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি টিমের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই—চিত্রগ্রাহক আনন্দ সরকার, সহকারী পরিচালক শাহ শান্ত ও কাঞ্চনসহ সবাই, যারা এই প্রোজেক্টকে সার্থক করেছে।”
অন্যদিকে, মায়া চরিত্রে অভিনয় করা ইসরাত জাহান পমি বলেন, “মায়া চরিত্রে কাজ করতে আমি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। এখানে শুধুই অভিনয় নয়, আমাকে হাওরের প্রতিনিধিত্বও করতে হয়েছে, যাতে দর্শক শুধু মায়াকেই নয়, বরং এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও সংস্কৃতিও দেখল।”
‘নাওবিবি’ মূলত হাওরের আবেগ, রহস্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা নিয়ে তৈরি একটি থ্রিলার সিনেমা। এর গল্পে দেখানো হয়েছে, কিভাবে একজন ট্র্যাভেলার অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়ে যায়, রাতের আঁধারে পানির মধ্যে অগোচরে জ্বলে উঠছে অদ্ভুত আগুন ও রহস্যময়ী তরুণী মায়া, এবং কিভাবে তিনি এই বিভ্রাটের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করেন। এতে জলবায়ুর পরিবর্তন, হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানুষের সংস্পর্শের গভীর প্রশংসা ফুটে উঠেছে।
সিনেমাটির মূল থিম জলবায়ু পরিবর্তন ও হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির উপর, যেখানে পরিবেশ সচেতনতা ও মানবদরদী ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে রোমাঞ্চ, রহস্য এবং আবেগের সিনেমাটিক উপস্থাপনা।
নির্মাতা মশিউর রহমান কায়েস জানান, পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ শেষ হলে ‘নাওবিবি’ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠানো হবে, পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন দর্শকদের জন্যও এর প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা রয়েছে।