বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা ধানের পাঁচটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন, যা কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং মাঠে সফলতার সঙ্গে পরীক্ষিত হচ্ছে। এই নতুন জাতগুলো দ্রুত কারিগরি কমিটির সভায় উপস্থাপন এবং অনুমোদনের জন্য প্রস্তত রয়েছে, এরপর তা জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পেলে কৃষকদের মধ্যে পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, অনুমোদনের পরে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এই ধানের জাতগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের মাধ্যমে ব্যবহার শুরু হবে।
ব্রির উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ও চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার ড. খোন্দকার মো. ইফতেখারুদ্দৌলা জানান, বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এই পাঁচটি নতুন ধানের জাত। এই উদ্ভাবনের ফলে দেশে মোট ধান জাতের সংখ্যা ১১৯-এ পৌঁছাবে, যেখানে আগে ছিল ১১৪। এই নতুন জাতগুলো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সহ উদ্ভাবিত, যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ ধান, লবণাক্ত সহনশীল, শীত সহনশীল, বোরো মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল এবং ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট প্রতিরোধী জাত।
বিশেষ করে ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ ধানটি উদ্ভাবন করেছেন ব্রি, যার প্রস্তাবিত নাম রাখা হয়েছে ব্রিধান-১১৫। এই জাতে ১৫ পিপিএম হারে ভিটামিন-ই উপস্থিত থাকছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভিটামিন-ই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে, কোষের ক্ষতি রক্ষা করে, বয়সজনিত সমস্যা কমায়, এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জাত হলো ব্রিধান-১১৬, যা ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট প্রতিরোধী। এই রোগটি ধানের পাতা ও শীষে আক্রমণ করে, যার ফলে পাতা বিবর্ণ ও ঝলসানো হয়ে যায় এবং শীষ সাদা বা বাদামি রঙের হয়ে পড়ে। নতুন এই জাতটি প্রথমের তুলনায় বেশি ফলন দেয় — যেখানে ব্রিধান-১১৩ এর ফলন ছিল ৮.১৫ টন, সেখানে ব্রিধান-১১৬ প্রতি হেক্টরে ফলন সর্বোচ্চ ৯.১ টন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ধানের লবণ-মাটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এই অঞ্চলের জন্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়ে সাত থেকে আটটি লবণসহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে নতুন জাত ব্রিধান-১১৭ অতিমাত্রার লবণ সহ্য করতে সক্ষম ও ফলন বেশি। এর জীবনকাল কম হলেও ফলন প্রতি হেক্টরে আরও এক টন বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে বোরো ধানের আবাদ এতটাই ব্যাপক—প্রায় ৫৩ শতাংশ জমিতে, যার মধ্যে ২০ শতাংশ হাওর এলাকায়। এই এলাকাগুলোর জন্য বিশেষভাবে শীত সহনশীল জাতগুলো উদ্ভাবনে কাজ চলছে, যার মধ্যে একটি হলো ব্রিধান-১১৮। এই জাতটি ক্ষণজীবী, কিন্তু ফলন বেশি ও শীতকালীন ঠাণ্ডা বিষয়ক ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।
এছাড়া, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন বলেছেন, বর্তমানে দেশের ধান উৎপাদন প্রায় চার কোটি টনে পৌঁছেছে, যা খাদ্য নিরাপত্তায় বড় অর্জন। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে, যেমন তীব্র গরম, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, শীতের প্রভাব এবং পোকার আক্রমণ। বিজ্ঞানীরা এসব সমস্যা মোকাবিলায় রোগ প্রতিরোধী এবং পরিবেশ সহনশীল জাতের বিকাশ অব্যাহত রেখেছেন। তারা আশ্বাস দিয়েছেন যে, এই নতুন জাতগুলো কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।