ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ নিশ্চিত ম্যাচের জন্য অস্থির অপেক্ষায় ছিলেন লিওনেল মেসি। তার পুরো পরিবারসহ তিনি আজ (শুক্রবার) উপস্থিত ছিলেন এস্তাদিও মনুমেন্তালে, যেখানে দর্শকদের উন্মত্ত শুভেচ্ছায় চোখে জল এসে যায় মেসির। এই দিনটিকে তিনি ছিল তাঁর বিশেষ এক ম্যাচের মতো, যেখানে জোড়া গোলের পাশাপাশি দলের জয় তাঁকে আরও বেশি গর্বিত করে তোলে। আর্জেন্টিনা ৩-০ ব্যবধানে ভেনেজুয়েলাকে হারানোর পেছনে লাউতারো মার্টিনেজের এক গোলও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্ডারলেস হাসি নিয়ে মাঠে পা রাখেন মেসি। ওয়ার্ম-আপ ও জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন সতীর্থদের সঙ্গে তার আবেগপ্রবণ মুহূর্ত ধরা পড়ে ক্যামেরায়। মাঠে প্রবেশের সময় দর্শকদের করতালি ও উচ্ছ্বাসের মধ্যে তিনি চোখে জল আনেন। ম্যাচের শেষে, আলোর ঝলকানি ও ভক্তদের উন্মুদ্দ উল্লাসে ভেসে যায় স্টেডিয়াম। গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে মেসি তার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান।
আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি আগেই প্রশংসায় ভরিয়ে ছিলেন এই স্বপ্নলোকের প্রিয় তারকাকে। পাশাপাশি, তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, ঘরের মাঠের এই ম্যাচটি হবে মেসির জন্য এক বিশেষ পরিসমাপ্তি। মেসি যেন তার অসাধারণ রূপে এই ম্যাচে দর্শকদের মুগ্ধ করেন, সেটাই কোচের প্রত্যাশা। ম্যাচের পুরো সময়ে আর্জেন্টিনার দখলে ছিল খেলা, বলের আধিপত্য ছিল সাড়ে ৭০ শতাংশের বেশি। তার সঙ্গে ছিল মার্টিনেজ, আলভারেজ ও আলমাদারার প্রচেষ্টায় ১৭টি শটের মধ্যে ৯টি লক্ষ্যে। বিপক্ষ ভেনেজুয়েলার মতো দলের বিরুদ্ধে এই পরিকল্পনা কার্যকর ছিল।
প্রথম কিছু মিনিটেই আর্জেন্টিনা সুযোগ তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে যায়। চতুর্থ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান রোমেরোর হেডে বল জালে জড়ানোর কথা থাকলেও তিনি অফসাইডে পড়ে যান। এরপর, খেলা ধীর হয়ে গেলে কৌশলীভাবে আর্জেন্টিনা সুযোগ খুঁজে নেয়। ৩৮ মিনিটের দিকে, লিয়েন্দ্রো পারেদেসের পাসে হুলিয়ান আলভারেজ বল নিয়ন্ত্রণ করে ডান দিক থেকে মেসির জন্য বাড়ান। আর্জেন্টিনার তারকা ফরোয়ার্ড সেই সুযোগ গ্রহণ করে নির্বিঘ্নে গোল করে লিড নেয়। বিরতিতে যেতে যেতে, আর্জেন্টিনারঙ আঘাত হানে আরও একবার। ৬০ মিনিটের সময়, রদ্রিগো ডি পলের সাথে পাস-শটের সংযোগে দল আরও এক গোলের দেখা পায়।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণ চালিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৭৫ মিনিটের দিকে, লাউতারো মার্টিনেজের ক্রসে, ডি বক্সের ভেতর থেকে তিনি গোল করেন, যা তার অষ্টম গোল। এরপর চার মিনিট পরে, আরও এক আকাশি-সাদা জার্সিধারী, মেসি, ব্যালন ডি’অর জয়ী প্রমাণ করেন তার গোলনৈপুণ্য। থিয়াগো আলমাদার পাসে তিনি ঠান্ডা মাথায় শটে জালের নেট খুঁজে নেন। এই গোলের মাধ্যমে মেসি তার ১১৪তম আন্তর্জাতিক গোল আদায় করেন, যা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত।
খেলার শেষ মুহূর্তে, রেফারির কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মেসি হ্যাটট্রিকের সুযোগ হাতছাড়া করেন। তবে তার দারুণ পারফরম্যান্স ও দুই গোলের জন্য, ম্যাচের আগেই তার উদযাপন শুরু হয়ে গিয়েছিল। হেডের মাধ্যমে দুর্লভ গোলের আশা করেছিলেন তাঁর ভক্তরা, তবে অফসাইডের কারণে সেটি হয়নি। তবে তার গোল ও নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা জিতেছে, আর এই ম্যাচটি হয়তো এখন থেকেই ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।