আশি-নব্বইয়ের দশকে ফুটবলে নেপালকে বেশ বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সময়ের বিবর্তনে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের নেপালের বিপক্ষে কোনো জয় নেই, থাকেনি কোনো গোলের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সর্বশেষ ২০২২ সালে মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ হেরেছিল ৩-০ গোলে। আজ নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত দেশের জাতীয় ফুটবল টিমের সঙ্গে ফিফা প্রীতি ম্যাচে দারুণভাবে উত্তেজনা ভরপুর ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যোগ্যতা ও মনোভাব দেখিয়ে দুই দলই গোলশূন্য ভাবে ড্র করে মাঠ ছেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে দুই দলই আগামী মাসে, অক্টোবরে, এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলবে। এই ফিফা উইন্ডোতে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে ও পরীক্ষামূলক প্রস্তুতি নিতে এই সিরিজের ম্যাচের আয়োজন করা হয়। প্রথম ম্যাচে কেউই গোল করতে পারেনি, ফলে দুটি দলেরই পয়েন্ট ভাগ্যিসই অর্জিত।
২০২১ সালে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচটি ছিল অঘোষিত সেমিফাইনাল। ঐ ম্যাচে নেপালকে হারালে বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠার সুযোগ পেত। কিন্তু ড্র করতে সক্ষম হওয়ার কারণে নেপাল ভারতের সঙ্গে ফাইনাল খেলেছে। একই বছর মার্চ মাসে বাংলাদেশের দল কাঠমান্ডুতে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। ঐ টুর্নামেন্টের ফাইনালে স্বাগতিক নেপাল ২-১ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।
এরপর, ২০২২ সালের ২৭ মার্চ, রাউন্ড রবিন লিগের ম্যাচে বাংলাদেশের দল আবারো গোলশূন্য ড্র করতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে চার বছর পর আবারও নেপালে ড্রয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে মরসালিনদের দল ইয়েমেনের বিপক্ষে নাটকীয় হারে বিদায় নেয়। আজকের ম্যাচে নেপালের বিরুদ্ধে ড্র করে অন্তত ফুটবলপ্রেমীদের জন্য খানিকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে, দশরথ স্টেডিয়াম এএফসির বড় টুর্নামেন্টের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত নয় বলে অনেকেরই মত।
মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় এসেছে বহু আলোচনা। নেপালের রোদ-বৃষ্টি খেলায় মাঠের অবস্থা বেশ খারাপ হওয়ায় দুই দলের ফুটবলাররাও নানা সমস্যায় পড়েছেন। বিভিন্ন সময় মাঠে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, যার জন্য খেলোয়াড়রা আঘাতপ্রাপ্ত হলেও বড় ধরনের ইনজুরি ঘটেনি।
বাংলাদেশের প্রধান গোলরক্ষক মিতুল মারমা আজকের ম্যাচে খেলেননি, তবে নতুন প্রেক্ষাপটে সুজন হোসেনের অভিষেক ম্যাচে খুব বেশি চাপ না থাকলেও নেপাল অবশ্যই আক্রমণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তবে পরিষ্কার গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশি দল, এবং খুব ভালোভাবেই সেই আক্রমণগুলো সামাল দেয়।
ম্যাচের ৩৬ মিনিটে বাংলাদেশ একটি সহজ সুযোগ তৈরি করে। ডান প্রান্ত থেকে রহমত মিয়ার লম্বা থ্রো-in-এ নেপালের গোলরক্ষক কিরণ বক্স থেকে বাইরে এসে বল ধরতে চান, কিন্তু সফল হননি। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড বল পেয়ে গেলে গোলের সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু শেষমেষ সে ভেলকি কাজে লাগাতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ দল কিছুটা গোছালো ফুটবল খেলে। বল দখল, পাসিংয়ে পরিকল্পনার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। নেপালের ফুটবলাররা দুই বছর ঘরোয়া লিগ খেলেনি, তারপরও তারা প্রায় দেড় মাসের প্রস্তুতিতে ভালো ফুটবল উপহার দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান কোচ ম্যাট রসের অধীনে দলটি বিল্ড আপ ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
আজকের খেলার ফল, ড্র, ফুটবলের স্বাভাবিকতা, দুই দলের পরিশ্রম এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে পাঠকদের জন্য স্বস্তির কিছু হতে পারে।