বাংলা সংগীতজগতের একজন সুপরিচিত নাম নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি, যিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন তারকা কণ্ঠশিল্পী। তাঁর সঙ্গীত জীবনের শুরু ২০০৬ সালে, যখন তিনি ‘হৃদয়ের কথা’ চলচ্চিত্রের জন্য প্লেব্যাক করেন। এরপর ২০০৯ সালে তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘ভালোবাসা অধরা’ প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালে ‘প্রজাপতি’ সিনেমার গানে কণ্ঠ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি বহু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন, যা শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছে। তবে বিগত আওয়ামী সরকারের সময় তিনি নানা ধরনের পেশাগত বাধার মুখে পড়েছেন। বিভিন্ন সময় শিল্পীর উপর নানা রকম বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় বলে তিনি জানান। सरकारी নানা অসুবিধার জন্য তাঁর পথচলা কিছুটা সহজ হয়নি। তিনি এক সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি বললেন, ‘আমার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েগেছে। রাজনৈতিক কারণে শিল্পীদের হেনস্তা এখনো চলছে।’ ন্যান্সি বলেন, তার দৃষ্টিকোণে, বর্তমানেও শিল্পীরা রাজনৈতিক কারণে রোষানলে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি হয়ত সহ্য করেছি, কিন্তু সবাই সহ্য করতে পারে না। যারা বিগত সরকারের জন্য কাজ করেছিল, তারাও যদি বিরোধিতা করত, তাহলে তাদেরও একই অবস্থা হত। আমি ঘরোয়া পরিস্থিতি সহ্য করেছি, অনেকে পারেনি। কিন্তু এখনও কিছু সংগীতশিল্পী নানা রকম বাধার মুখে আছেন, যেটা তাদের যেমন মানসিকভাবে ব্যথিত করে, তেমনই তাদের কাজের উপরও প্রভাব ফেলে।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘২০১৩ সালের শেষের দিকে ও ২০১৪ সালে আমি একের পর এক বিপর্যয়ের মুখে পড়া শুরু করি। আমার ধরন মূলত কর্পোরেট শো ও টিভি অনুষ্ঠান কেন্দ্রিক, যা মূলত ওপেন এ্যারার কনসার্টের জন্য উপযুক্ত নয়। এর ফলে আমি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ হয়েছি। প্রধান অতিথি হিসেবে নানা মন্ত্রীর, প্রতিমন্ত্রীর বা সচিবের উপস্থিতি থাকলেও, আমার নাম শুনে অনেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই বন্ধ হয়ে যায়। একের পর এক প্রোগ্রাম বাতিল হয়, যদিও আমি কাজ করতে আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু বাধা পেতে থাকি। এর ফলে মন খারাপ হয়নি বললে বলা হবে আসল না, কিন্তু এক ধরণের হতাশা অবশ্যই ছিল। আমি ওষুধ খেতাম, কিছু বলতে গেলে অনেক সময় আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশও করেছিলাম। ২০১৭ সালে আমাকে এখনকার মতো কাজের সক্ষমতা থাকা সত্বেও কাজ করতে দেওয়া হয়নি, এ সব আমাকে মানসিকভাবে গভীর আঘাত করেছে। আমি এসব থেকে নিজেকে সরে এসে পুরোপুরি ভাবনায় অর্পিত হয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ছোট বয়সে শোবিজে প্রবেশের পরেও তার নিজেকে কখনো বড় তারকা মনে হয়নি। বরং তিনি সাধারণ জীবনযাপন পছন্দ করেন। এক বছর আগে, ২০১৪ সালে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, যেখানে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। তখন অনেকেই বলেন, পুলিশ বাড়ির সামনে চলে আসে। তখন তিনি বলেন, ‘এটা আমি একজন সাধারণ মানুষ নই, কিছু একজন বিশেষ ব্যক্তি। আমি কেবল আমার মতামত ব্যক্ত করেছিলাম। আমি বলি, সময় এখন আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার।’ আসলে, তিনি বলছেন, তার বিষয়টি ছিল একটি রাজনৈতিক মতামত, যা তখনকার নির্বাচন প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এই ঘটনাগুলো তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের বিপরীতে ছিল, যার কারণে তিনি অনেকটা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।