১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে নেতৃত্বে আছেন শেখ হাসিনা। এত দীর্ঘ সময় ধরে তার নেতৃত্বের পরেও তিনি উত্তরাধিকার পরিকল্পনা বা ‘সাকসেসন প্ল্যান’ বিষয়ে কখনোই স্পষ্ট করে কিছু বলেননি বা নিজের মনোভাব প্রকাশ করেননি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের পরে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতির কারণে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে তিনি ভারতের মাটিতে অতিথি হিসেবে থাকছেন, যেখানে তার চলাফেরা ও দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। তবে বয়সের চাপ ও পরিস্থিতির স্বাভাবিক চাপে তিনি হয়তো এখন তার উত্তরাধিকার পরিকল্পনা স্পষ্ট করতে উৎসুক। এবার তিনি তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নেতৃত্বে আনতে চাচ্ছেন। পাশাপাশি শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিরও দায়িত্বে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মডেল অনুসরণ করে একটি নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলবেন, যেখানে পরিবারের সদস্যরা নেতৃত্বে থাকবেন। সজীব বর্তমানে মার্কিন নাগরিক হলেও তিনি দলের মুখপাত্র হিসেবে সক্রিয়। তিনি নিয়মিত গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন, দলীয় নানা কর্মসূচি চালান এবং বাইরের দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেন। অন্যদিকে, সায়মা ওয়াজেদও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি গত বছর হু’তে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেলে বাংলাদেশ সরকারের আপত্তির কারণে এই দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং এখন পুরোপুরি রাজনীতিতে মনোযোগী। এর মধ্যেই, ভারতের কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বের মডেল অনুসরণ করছে শেখ হাসিনা। রাহুল ও প্রিয়াঙ্কার সম্পর্ক, তাদের দায়িত্ব ও নেতৃত্বের গঠন এটাই নির্দেশ করে যে, আওয়ামী লীগও পরিবার ভিত্তিক নেতৃত্ব ব্যবস্থা চালু করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার গান্ধী পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে তিনি নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিশ্লেষकों ধারণা, ভারতীয় কংগ্রেসের মতোই আওয়ামী লীগ এখন পরিবারকেন্দ্রিক দল হয়ে উঠছে, যেখানে নেতৃত্বের রাশ পরিবারেরই হাতে রয়েছে। দলটি এখন এক সংকটজনক মুহূর্তে রয়েছে, তবে নেতৃত্বের মূল কাঠামো এখনও দলীয় ‘ফ্যামিলির’ হাতে। তবে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দীর্ঘ সময় ভারতে থাকলেও দলীয় কার্যক্রমে নিয়মিত থাকতে পারেননি। তিনি ভরসা করছেন অন্য নেতাদের ওপর, যেমন আসাদুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ওবায়দুল কাদের নিজেও দলের বেশ কিছু দায়িত্ব সামলে চলেছেন। জয় অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ও আন্তর্জাতিক প্যাঁচে দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ এখন একটি কঠিন সময় পার করছে, তবে বড় দলের নেতৃত্ব এখনো মূলত ‘ফ্যামিলির’ হাতে सुरक्षित।