সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় রোববার সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে সম্মাননা দেয়া হয়। পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে শিল্পীর একক সংগীতানুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক বদরুদ্দিন ওমরের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রদর্শিত হয় শিল্পীর উপর নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’। এরপর নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন বুঝি আর এলো’ শীর্ষক নৃত্যনাট্য, যা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় ঘটে।
শিল্পীর জন্মদিনকে ঘিরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ সময় তিনি বলেন, ‘যাঁর গান শুনে শুনে আমরা সময়ের সঙ্গে সাথে গভীর আবেগে জড়িয়ে গেছি, যাঁর কণ্ঠের সুর আমাদের হৃদয়ে স্পর্শ করে, তিনি বাংলার গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিন। এই শিল্পীতে মন্ত্রণালয় গর্বিত ও আনন্দিত।’
অন্যদিকে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ মন্তব্য করেন, ‘বাংলা গান মানেই আবেগ, স্মৃতি ও হৃদয়স্পর্শী সুরের এক অভূতপূর্ব জগৎ। যেখানে কারো কণ্ঠ সহজেই শ্রোতার হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়, সেই জগতে অন্যতম স্থান করে নিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন, যিনি অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে সংগীতজগতে নিজের জায়গা করে আছেন। তাঁর কণ্ঠ চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশনসহ দৈনন্দিন জীবনের মধুর সঙ্গীতের অংশ হয়ে উঠেছে।’
স্মৃতি ঘেরা স্মারক আলোচনা ও স্মৃতিচারণা করেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, নকিব খান, পার্থ বড়ুয়া, খুরশীদ আলম, রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা।
অতঃপর শিল্পীর স্বাক্ষরাত্মক একক সংগীতানুষ্ঠান শুরু হয়, যেখানে তিনি জনপ্রিয় আরও অনেক গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন।
প্রথমে আলোচনা ও আয়োজনের সূচনা করেন নন্দিত অভিনেতা আফজাল হোসেন। বাংলা গানের গৌরবজনক কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক সাংস্কৃতিক পরিবারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। সংগীতের আগ্রহ প্রথমে তাঁর মা থেকে অর্জন করেন। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ষোলো হাজারের বেশি গান রেকর্ড করেছেন। ১৯৮৩ সালে ভারতের বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ তাকে ‘সংসদ রত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে, এবং ১৯৮৫ সালে প্রদান করা হয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী। তিনি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ এসব পুরস্কার—একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে সম্মানিত হন।
বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পী হিসেবে তিনি ১৫ বার শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন, যা রেকর্ডের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
আজকের খবর/আতা