ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের রুখতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক চাঞ্চল্যকর পরিকল্পনা করেছেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) চীন ও ভারতের পণ্যে শতভাগ শুল্ক আরোপের আহ্বান জানান। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেও চাইছেন বলে জানা গেছে। এই বিষয়টি জানায় বিশেষ সূত্র ও বাণিজ্য সম্পর্কের বিশ্লেষকরা।
ফিন্যানশিয়াল টাইমস প্রথম এই খবর প্রকাশ করে, যেখানে জানানো হয় যে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ কর্মকর্তাদের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকে ট্রাম্প এই প্রস্তাব দেন। আলোচনা হয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় নিয়ে। এই সময়ে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব বন্দরে এসেছে, যখন তিনি আগেই মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শান্তি আলোচনায় হিমশিম খাচ্ছেন। পাশাপাশি রাশিয়া ইউক্রেনে আঘাতের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বা পরবর্তী সপ্তাহের শুরুতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। এর আগে রুশ সামরিক হামলা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়ে আগ্রাসনের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। ইউক্রেনে রুশ সেনাদের এই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৮১০টি ড্রোন ও ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলে দাবি করে কিয়েভ।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাসে অসংখ্য সাধারণ মানুষ পেনশন তুলতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাশিয়ার গ্লাইড বোমা হামলায় ২০ জনেরও বেশি নিহত হয়। এই ভয়াবহ হামলার মাধ্যমে রাশিয়া তাদের আক্রমণ আরও কঠোর করে তুলেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, তিনি এই পরিস্থিতিতে খুবই অসন্তুষ্ট এবং ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে বলেন, এই অবস্থা আর যেন না চলতে দেওয়া যায়। যদিও, এর আগেও তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু পুতিন কখনোই কোনও হুঁশিয়ারি মানেননি, ফলে সেই অঙ্গীকারও বাস্তবায়িত হয়নি।
আত্মপ্রকাশে, আলাস্কায় গত মাসে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ব্যর্থ হয়, যেখানে কোনও শান্তি চুক্তি হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই ইইউকে শুল্ক আরোপের আহ্বান একটি বড় কূটনৈতিক বার্তা, যা আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও জোড়ালো রাজনৈতিক চাপের একটি অংশ। এর পাশাপাশি, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট একবার দৃষ্টান্ত দিলেন যে, ওয়াশিংটন অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে প্রস্তুত, তবে এর জন্য শক্তিশালী ইউরোপীয় সমর্থনের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প আরও জানালেন যে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আলোচনা চালাচ্ছে। তিনি শিগগিরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে কথা বলবেন ও আলোচনার সমাপ্তি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ট্রাম্পের এই ইঙ্গিত সূচক করে যে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও সুদৃঢ় হওয়ার পথে।
অন্যদিকে, চীন ও ভারত রাশিয়াকে বড় ক্রেতার মতো বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে রুশ তেল। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ বেশি জরিমানা রাশিয়ার সঙ্গে তেল বিক্রির জন্য হয়েছে।
এদিকে ইইউ ঘোষণা করেছে তারা রুশ জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে উদ্যোগ নিচ্ছে, তবে এখনও তাদের আনুমানিক ১৯ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করছে।
যদি ইইউ চীন ও ভারতের ওপর এই ধরনের শুল্ক আরোপ করে, তা রাশিয়াকে একা করে তুলবে না, বরং এটি একটি নতুন বাণিজ্য কৌশল হিসেবে তাকাতে হবে যেখানে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ব্যবসা চালিয়ে যেতে হবে। এর মাধ্যমে রাশিয়া থেকে অর্থনীতিকে আলাদা করার পাশাপাশি, বাণিজ্যকেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে।