কক্সবাজার জেলার পানেরছড়া বনবিভাগের দক্ষিণ বিট ও রেঞ্জ এলাকায় টেকসই বনায়ন ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই এলাকায় বনবিভাগের কর্মীরা জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে বনভূমির সম্প্রসারণ, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশের সংরক্ষণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সততা, নিষ্ঠা এবং দায়িত্বশীলতা কারণে পানেরছড়ায় বহু প্রাকৃতিক বনভূমি, পাহাড় ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা পাচ্ছে। বিশেষ করে এই বনাঞ্চলে অবকাঠামোর নিরাপত্তার জন্য অসংখ্য এশিয়ান হাতিও আশ্রয় করেছেন।
পানোরছড়া বিটের সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৬টি বন সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি পিওআর বন মামলা এবং একটি ইউডিওআর মামলা রয়েছে। বন অপরাধের জন্য ২৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে গোলকাঠের ২৭৭.১৭ ঘনফুট, জ্বালানি কাঠের ৩৩৯ ঘনফুট, ৬০৮টি মোথা, ডাম্পার ট্রাকের দুটি, কোদাল ও বেলচা ১৩টি, ৪৬,৩২৮ ঘনফুট মাটি, ছোড় কাটার ২টি, দা ৩টি, এছাড়া কয়লার ৬ বস্তা, কুঞ্জি 1টি, রশির দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট এবং বল্লী ৩৮৮ পিস।
পানেরছড়ার মোট আয়তন ১৩৭৫.৬৪ হেক্টর। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে ১০২১.০৪ হেক্টর, যেখানে রক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ৩৫৪.৬৪ হেক্টর। এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষার পাশাপাশি বনবিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিট কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা এই ব্যাপারে জানান, বনবিভাগের মূল লক্ষ্য হলো প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থলের রক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, পানে আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত, যেখানে অনেক সময় জমি দখলদার ও ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক দখল করে থাকেন। তারপরও আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দখলদার ও ভূমি দস্যুদের দমন করতে মামলা ও জব্দ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু সময় প্রভাবশালী ব্যক্তির হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে। তবুও সরকারি সম্পদ রক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার অবিচল।
তিনি বলেন, কিছু কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। তাদের অপপ্রচার ও ভুঁইফোড় মিডিয়ার অসৎ সুবিধার জন্য আমার নামে মিথ্যা কাহিনী সৃষ্টি করছে, যা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক বিষয়।
স্থানীয় জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও সচেতন মহল জানিয়েছেন, পানেরছড়া আন্তঃজেলা জবরদখল ও অস্থিতিশীলতার এক স্থান। বনাবনয়ন কর্মকাণ্ডের সময় প্রায়ই বনকর্মীদের সঙ্গে দুর্বিপাকের সম্মুখীন হয় তারা, এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও জনবল সংস্থান জরুরি।
পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা ধরিত্রী রক্ষা করি (ধরা) কক্সবাজার শাখার সদস্য সচিব হারুনুর রশীদ বলেন, পানেরছড়ায় বনভূমি রক্ষার কাজটি খুবই কঠিন। এখানে ব্যাপকভাবে জবরদখল ও স্বার্থের রাজনীতি চলে। বনবিভাগের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা বনজমি দখল করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, জবরদখলকারীদের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বন সংকট প্রতিরোধ।