ফিলিস্তিনের গাজায় চলতি সময়ের মধ্যে ২৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ভয়াবহ ইসরায়েলি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার বাহিনী। হামাসের উৎখাত এবং জিম্মি মুক্তির নামে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রতিদিনই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। পাশাপাশি, তারা লেবানন, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের বিভিন্ন অংশেও আকস্মিক ও ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে। গত দুই বছরে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে নিঃসন্দেহে ইসরায়েল এক বিষফোঁড়া হিসেবে গড়ে উঠেছে, যেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর শান্তি ও নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও বিশ্ব সম্প্রদায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় তোলে, তবুও যুক্তরাষ্ট্র টানা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহুর সরকারের অ Gewaltিপ্রবণ নীতিকে। এর ফলে, এই দখলদার রাষ্ট্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সম্প্রতি, কাতার ও তিউনিসিয়া কেন্দ্রিক হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মাত্র ৭২ ঘণ্টায় ইসরায়েল বিভিন্ন মুসলিম দেশে হামলা চালিয়েছে। গাজায় সিরিজ হামলায় নিহতের সংখ্যা অন্তত ১৫০ জনের বেশি, আহত হয়েছে আরও শত শত মানুষ। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার দোহায় হামাস নেতাদের বৈঠকের সময় একটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ঐ বৈঠকটি গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিল। হামলায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল আল-হায়্যার ছেলে, তার অফিসের পরিচালক, তিন দেহরক্ষী ও একজন কাতারি নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। তবে, হামাসের শীর্ষ নেতারা প্রাণে বেঁচে গেছেন।
গত সোমবার শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫০ জন নিহত, আহত হয়েছে ৫৪০ জনের বেশি। একদিনেই নিহতের সংখ্যা ৬৭ জন ও আহতের সংখ্যা ৩২০। ত্রাণ সংগ্রহের সময় ১৪ জন নিহত হন, শিশুসহ আরও অন্য ছয়জন মারা যান অনাহারে। মঙ্গলবার ৮৩ জন নিহত ও ২২৩ জন আহত হন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে, এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৬৪ হাজার ৬৫৬ জন, যাদের মধ্যে ৪০০৪ জন ক্ষুধা-জনিত কারণে মারা গেছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ, তাদের মৃত বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সোমবার দুপুরে লেবাননের বেকা ও হারমেল জেলায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করে, তারা হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগুদাম ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা চালিয়েছে, যদিও এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ যুদ্ধের মধ্যে, ইসরায়েল নিয়মিত লেবাননে হামলা চালাচ্ছে, যা যুদ্ধবিরোধী চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল। মঙ্গলবারের বৈরুতের দক্ষিণে বারজা গ্রামে ড্রোন হামলায় আহত হন হিজবুল্লাহর এক সদস্য।
সোমবার রাতে সিরিয়ার হোমসের সামরিক ঘাঁটি ও লাতাকিয়া শহরের কাছে একটি সামরিক ব্যারাকে হামলা চালায় ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমান। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এই হামলা তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে এ অঞ্চলে ইসরায়েল হিংসাত্মক হামলা অব্যাহত রেখেছে। চলতি বছরেই প্রায় ১০০টি হামলায় অন্তত ৬১ জন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, তিউনিসিয়ার সিদি বু সাঈদ বন্দরে ‘ফ্যামিলি বোট’ নামে একটি জাহাজে ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল। এ সময় ২৩ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই জাহাজে ছয় যাত্রী ছিলেন। আগুন লাগলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এরপর, তিউনিসিয়ার উপকূলে যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী ‘আলমা’ জাহাজেও একই ধরনের হামলা হয়।
সবশেষে, গত বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হুথি গোষ্ঠীর অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় সানার বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি মাসের শুরুতেই একই লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা হয়েছিল। এর আগে, ২৮ আগস্ট হুথি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল-রাহাউইসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বৃহৎ ইসরায়েলি হামলায় হত্যা করা হয়।