নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি অভিযোগ করেছেন যে, ভারতের সাথে তার দেশের নৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধের কারণেই তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী পদ হারিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) জেন-জির আন্দোলনের মুখে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর পর থেকেই গুঞ্জন ওঠে যে, তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন, তবে তা সত্য নয়; তিনি নেপালের শিবপুরি ব্যারাকে অবস্থান করছেন। আজ বুধবার তিনি নিজের দলের মহাসচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন, তার প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর মূল কারণ ছিল ভারতের সাথে লিপুলেখ ও অযোধ্যা সংক্রান্ত বিরোধ। অলি অভিযোগ করেছেন, যদি তিনি অযোধ্যা বা দেবতা রাম নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতেন না এবং লিপুলেখের বিষয়ে কথা বলতেন না, তাহলে হয়তো তিনি এখনও ক্ষমতায় থাকতেন। তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা হারিয়েছি কারণ আমি অযোধ্যায় দেবতা রাম জন্মের দাবির বিরোধিতা করেছিলাম।
ভারত ও নেপালের মধ্যে লিপুলেখ গিরিপথ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ১৮১৬ সালে সুগৌলি চুক্তির ভিত্তিতে এই অঞ্চলটি নির্ধারিত হয়েছিল। নেপালের দাবি অনুযায়ী, কালী নদীর উৎপত্তি লিম্পিয়াধুরা থেকে, যা লিপুলেখের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, এবং এ অঞ্চলটি নেপালের ভূখণ্ড। অন্যদিকে, ভারতের দাবি, নদীটি কালাপানি গ্রামের কাছ থেকে শুরু হয়েছে, এবং তাঁরা এই অঞ্চলটিকে নিজেদের উত্তরাখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখছে। অলি ঘনিষ্ঠভাবে এই বিরোধের সাথে জড়িত ছিলেন এবং বহুবার এই অঞ্চলটি নেপালের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এসব ঘোষণা পর ভারতকে অনুরোধ করে তারা এই অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করতে; এমনকি তারা চীনকেও এই অঞ্চলটি তাদের ভূখণ্ড বলে জানিয়েছে। তবে ভারত এই ভারতনির্মিত দাবিগুলিকে অস্বীকার করে বলে, তারা ১৯৫৪ সাল থেকে লিপুলেখ দিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চালাচ্ছে।
আরেকটি বিতর্কিত বিষয়ে, অলি ২০২০ সালে মন্তব্য করেছিলেন, দেবতা রাম ভারতের নয়, তবে নেপালের জন্মপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘রামের অযোধ্যা রাজ্য নেপালের পূর্ব বীরগঞ্জে অবস্থিত। ভারত অন্য একটি ভুয়া অযোধ্যা তৈরি করেছে।’ পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, রাম সীতার বিয়ে করেছিলেন। তবে ভারতের দাবি অনুযায়ী, রাম ভারতে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন। অলি অভিযোগ করেন, ‘প্রাচীন সময়ে দূরের স্থানে বিয়ে প্রচলিত ছিল না।’ তার এই বক্তব্যের জন্য ভারতের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।