৩০৩৩ বছর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১৭৭ জন প্রার্থী। এবারের নির্বাচনটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় কারণ এতে মোট আটটি প্যানেল অংশগ্রহণ করছে, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র দলের সমর্থনে স্বতন্ত্রভাবে লড়াই করছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য প্রার্থীদের প্রচারণার সময় নির্ধারিত ছিল ২৮ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে প্রার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও নানা শ্লোগানে নিজেদের প্রচার চালিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলগুলো হল: গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, ছাত্রশিবিরের ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্রদলের নিজস্ব প্যানেল, বামপন্থী দলগুলোর তিনটি পৃথক প্যানেল, এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দুটি দল।
শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। এতে ভিপি পদে রয়েছেন জাবি শাখা শিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব, জিএস পদে মনোনীত মজহারুল ইসলাম, আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ফেরদৌস আল হাসান এবং নারী এজিএস পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এই প্যানেলে ছয়জন নারী শিক্ষার্থী আছেন, একটি দম্পতিকে স্থান দিয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখা একটি ২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেল ঘোষণা করেছে। এতে ভিপি পদে আছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং জিএস পদে আছেন আবু তৌহিদ মো. সিয়াম। এই দলের আরও সদস্যরা হলেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) মালিহা নামলাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) জিয়া উদ্দিন আয়ান।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে, তারা ২৫ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করেছে, যেখানে জিএস পদে থাকবেন ছাত্রদলের একমাত্র নারী প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী, এবং ভিপি পদে রয়েছেন মো. শেখ সাদী হাসান। অন্য প্রার্থীরা হলেন, এজিএস (পুরুষ) মো. সাজ্জাদুল ইসলাম ও এজিএস (নারী) আঞ্জুমান আরা ইকরাঈ।
বামপন্থী দলের মধ্যে, এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল। এই দলটি ভিপি প্রার্থী ছাড়াই অংশ নিচ্ছে, এবং এর সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন শরন এহসান। এছাড়াও এই প্যানেলে একজন নারী, সাতজন নারী, ছয়জন আদিবাসী, তিনজন বুকসংঘের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য প্রার্থীরা আছেন।
আরেকটি অংশীদার প্যানেল হলো ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, যেখানে ভিপি প্রার্থী থাকছেন না। এই প্যানেলের জিএস পদে রয়েছেন ছাত্রইউনিয়নের সভাপতি ইমন। এর অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সোহাগী সামিয়া, সৈয়দ তানজিম আহমেদ, তানজিল আহমেদ ও সাদিয়া ইমরোজ।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিক্ষার্থীরা গঠিত ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে আরেকটি দল রয়েছে, যার ভিপি পদে রয়েছেন মো. মাহফুজুল ইসলাম। এই প্যানেলে অন্য কোনো নারী প্রার্থী নেই, তবে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১১,৮৯৭, এর মধ্যে ছাত্র ৬,১১৫ জন ও ছাত্রী ৫,৭২৮ জন। প্রতিটি হলেই চালু হয়েছে ভোটগ্রহণ, মোট ২১টি কেন্দ্র এবং ২২৪টি বুথে ভোট নেওয়া হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য প্রতিটি হলের নিজস্ব ভোটকেন্দ্র রয়েছে।
এভাবে আগামীকালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একাদশে রূপ নেবে, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বতন্ত্র ও সমর্থিত প্রার্থীসহ মোট আটটি প্যানেলের লড়াই দেখব আমরা।