জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধের জন্য শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যারা দায়ী, তাদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি জানাই। তিনি এই মন্তব্য করেন ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন কিভাবে আন্দোলনের সময় সমন্বয়কারীদের জোরপূর্বক আন্দোলন থেকে সরানোর জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল এবং আন্দোলন দমন করা নিয়ে বিভিন্ন বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা পুনরুল্লেখ করেন। এর পাশাপাশি, তিনি প্রশ্ন করেন দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পদ কি বর্তমানে অপহরণ হচ্ছে? নাহিদ বলেন, আন্দোলনের সময় পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম ছিল, তবে আন্দোলনের পরে গণমাধ্যমের সংস্কার আশা করলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
এর আগে, এই মামলার দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অপমান করেন। এই মন্তব্যের ফলে দেশের ছাত্ররা অপমানিত বোধ করে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অবতীর্ণ হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে, আন্দোলন রুখতে শুধু ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এর পরই ১৬ জুলাই দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় যেখানে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হন এবং আরও ছয়জন প্রাণ হারান।
নাহিদ উল্লেখ করেন, ১৭ জুলাই আন্দোলন প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য চাপ সৃষ্টি হয়। একইদিন, দেশের বিভিন্ন স্থানে শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এবং ১৮ জুলাই সখ্য মানুষের রাজপথে নামেন। বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্ররা ব্যাপক আন্দোলন করে। তিনি জানান, এই সময় আন্দোলনের নেতা চালকদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং তারা আত্মগোপনে চলে যান।
তিনি আরও জানান, ওইদিন সারা দেশে বহু ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন এবং রাতের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯ জুলাই, পুলিশ ও সরকারি সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায়, যার ফলে অনেক মানুষ গুরুতর আহত ও নিহত হন।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্র ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার মত বিশদ, যেখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তথ্যসূত্র, জব্দ তালিকা, দালিলিক প্রমাণ এবং শহীদদের তালিকা। এই মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয়।