শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটে গেল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. মারজিয়া খাতুনকে এক রোগীর অভিভাবক ‘আপু’ বলে সম্বোধন করার পর তিনি উত্তেজিত হয়ে রোগীর দিকে ক্রোধ প্রকাশ করে তার কক্ষ থেকে তাকে এবং অভিভাবককে বের করে দেন। এই ঘটনার মাধ্যমে জেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার কিছু অসুবিধার এক ঝলক উঠে এসেছে।
জানা গেছে, অভিযোগকারী রোগীর নাম কাজী মাসুম, তিনি জেলা শহরের নয়ানী বাজার মহল্লার বাসিন্দা। দুপুর ২টার দিকে তার ছোট মেয়ের প্রবল পেট ব্যথা দেখা দিলে তিনি শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অনন্যা তার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা ও ঔষধ লিখে দেন, কিন্তু ঔষধগুলো তিনি স্থানীয় দোকান থেকে কিনতে গিয়ে আবার ফেরেন। বহু প্রত্যাশার পরও সন্ধান না পাওয়ায় তিনি ফিরে যান hospital. এই সময়ে তিনি ডা. অনন্যার কাছে যান এবং প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে জানতে চান যে ঔষধগুলো কোথায় পাওয়া যাবে।
তবে ডা. অনন্যার ডিউটি শেষে তিনি চলে যাওয়ায় ডা. মারজিয়া খাতুনের ওপর চাপ পড়ে। অভিভাবক কাজী মাসুম তার ছোট মেয়ের অভিযোগ, একই সময়ে ‘আপু’ বলে ডাকায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। তিনি গিয়ে ডা. মারজিয়া’র কাছে প্রেসক্রিপশনটি দেখান এবং অভিযোগ করেন যে ঔষধগুলো হাসপাতালে নেই। তখনই ‘আপু’ বলে ডাকায় ডা. মারজিয়া ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘আমাকে আপু ডাকছেন কেন? আমি মেডিকেল অফিসার। যান, বের হয়ে যান আমার রুম থেকে।’ এই কথা শুনে তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে গিয়ে উক্ত ঔষধ খুঁজতে পারেননি বলে জানানো হয়। এরপর তিনি তৎক্ষণাৎ গিয়ে তার কক্ষে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেন এবং অভিভাবককে গালমন্দ করে বের করে দেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও ডা. তাহেরাতুল আশরাফি বলেন, এটি সম্ভবত একটি ভুলের ফলাফল হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। অফিসিয়ালি অভিযোগ করার জন্য শনিবার আসতে হবে।’
অপর দিকে, হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকরাও এই বিষয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, শুধু ডা. মারজিয়া নন, অধিকাংশ চিকিৎসকই রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন বলে তাদের অভিযোগ।
শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহিন এই বিষয়ে বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। একজন চিকিৎসকের এই ধরনের আচরণ আদর্শ না। আমাদের উচিত রোগীর পরিবারের সঙ্গে আরও নমনীয় ও সহনশীল হওয়া। আমি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে এ বিষয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলছেন, ‘মানুষের ব্যবহার পারিবারিক শিক্ষা থেকে আসে। তবে, আমাদের উচিত রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে আরও সদয় ও নম্র আচরণ করা। আমি ডা. মারজিয়াকে এ বিষয়ে সতর্ক করব।’