বেশ কয়েক মাস পর বাজারে চালের দাম সামান্য হ্রাস পেয়েছে। এর মূল কারণ হলো ভারত থেকে আমদানি বেড়ে যাওয়া, যা দাম কমাতে সহায়ক হয়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে অন্যদিকে, সবজি, মাছ ও পেঁয়াজের দাম এখনও স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে আসেনি। অনেক সবজি এখনো কম দামে কেনা যাচ্ছে না, যেখানে অতীতের তুলনায় এদের দাম কিছুটা নেমে আসলেও, একটি কেজি সবজির জন্য এখনো গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এর আগে এর মূল্য আরও বেশি ছিল। অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও বিভিন্ন ধরণের মুদি পণ্যের দাম একেবারেই অপরিবর্তিত রয়েছে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। চালের বাজারে বিক্রেতারা জানান, ভারত থেকে সরু নাজিরশাইল ও মোটা ধরনের চাল এখন বেশি আসে, ফলে এদের দাম কমে এসেছে। তবে, জনপ্রিয় মিনিকেট চালের দাম এখনও আগের মতোই রয়ে গেছে। এখন মার্কেটে প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায়, যা আগে ছিল ৯০-৯২ টাকা। এর পাশাপাশি, মোটা চালের (পায়জাম ও স্বর্ণা) দাম এখন ৫৬ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৫২-৫৫ টাকা। মিনিকেট চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে, ৭৮ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সেগুনবাগিচার বাজারের সজিব রাইস এজেন্সির কর্ণধার সালমান হোসেন বলেন, ভারত থেকে প্রচুর চাল আসায় বাজারে দাম কমে এসেছে। তবে, দেশি মিনিকেট চালের দাম এখনও আগের মতো রয়েছে। আমদানি বাড়লে দাম আরও কমতে পারে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
তালতলা বাজারের চাল বিক্রেতা হোসেন আলী জানান, মোকামে চালের দাম প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) ১০০ থেকে ১২০ টাকা কমে গেছে। এখন প্রতি বস্তার মূল্য ২০০০ টাকার মধ্যে এসে গেছে, যা আগে ছিল প্রায় ২২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে, বেশিরভাগ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম একই রকম আছে। পুরোনো চালের দামও অনেকটাই অপরিবর্তিত।
বাজারে দীর্ঘ সময়ের পর চালের দাম কিছুটা কমছে, যা বেশ কিছু দিন ধরে বেড়ে থাকার পর দীর্ঘ বিরতি শেষে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসার লক্ষণ। এ সময়ে বাজারে চালের দাম অনেকটাই স্থিতিশীল।
অন্যদিকে, রামপুরা ও খিলগাঁওয়ের সবজি বাজারগুলোতে দাম কিছুটা পড়লেও, স্বস্তি এখনও আসেনি। এখানেও সবজির দাম এখনো বেশ উচ্চ পর্যায়ে রয়ে গেছে। এখন প্রতি কেজি সবজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত কয়েক সপ্তাহে দাম ৮০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
বাজারে বর্তমানে পটোল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা, বেগুন, বরবটি, চিচিঙ্গার দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। অন্যদিকে, পেঁপে ৪০ টাকা এবং আলু ৩০ টাকায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। পেঁয়াজের বাজারে সামান্য মূল্য কমেছে। আগে যেখানে কেজি প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হতো, এখন এটি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে এই দাম আরও কিছুটা বেশি হতে পারে।
মাছের বাজারে চড়া দামের পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে চাষের মাছের সরবরাহ কম হওয়ায় নদীর মাছের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে, ইলিশ ও চিংড়ির দাম অনেকটাই চড়া। প্রায় ৭০০ গ্রাম ওজনের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪,০০০ টাকায়। একই ওজনের ইলিশের পিস এখন দরে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের মাছের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি দাম ৮০০ টাকা।
চাষের চিংড়ির দাম এখন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা প্রতি কেজি, আর নদীর চিংড়ির দাম ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। সাধারণত, এর দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা কম থাকে।
অন্য মাছের মধ্যে কই, শিং, শোল, ট্যাংরা ও পুঁটির দাম বাড়তি হয়েছে। তেলাপিয়া, রুই ও পাঙ্গাশের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে প্রতি কেজি রুই ও কাতলা ৩৫০-৪২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৬০ টাকা, এবং পাঙ্গাশ ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম এখনো ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা প্রতি কেজি, এবং সোনালি জাতের মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম এখন প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
সব মিলিয়ে, সাম্প্রতিককালে চালের দাম একটু কমলেও সবজির দাম এখনো সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। তবে, খাবার স্বস্তি ফিরে আসার অপেক্ষায়, বাজারের দামের আরও কিছুটা পতনের প্রত্যাশা bobaiar।