যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, ইসরায়েলকে কখনোই পশ্চিম তীর দখল করতে দেবেন না। এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটি ফিলিস্তিনের জন্য অত্যন্ত সংকটপূর্ণ এবং এর দখল প্রতিরোধে মার্কিন নেতৃত্ব দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে গাজা সংকট নিয়ে শিগগিরই একটি সমঝোতা সম্ভব হতে পারে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর। তার এই ভাষণের আগে, বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথনে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, “আমি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না… এটা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।”
অন্যদিকে, ট্রাম্প জানান, তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে আগামী সোমবার বৈঠক করবেন। একইসঙ্গে তিনি বলছেন, গাজা নিয়ে নেতানিয়াহুর সাথে মধ্যে সমঝোতা ‘প্রায় কাছাকাছি’। তবে এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের উপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদে জোর দিচ্ছে। নেতানিয়াহুর ডানপন্থি রাজনৈতিক জোটের উগ্র জাতীয়তাবাদীরা পশ্চিম তীর দখলের পক্ষে থাকলেও, বিশ্ব সম্প্রদায় এই পদক্ষেপের নিন্দা জানাচ্ছে।
যুক্তরাজ্য ও জার্মানি সতর্ক করে বলছে, পশ্চিম তীর দখল করলে এর দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ‘নৈতিক, আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’।
এমন পরিস্থিতিতে, বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানান, তিনি নেতানিয়াহুর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গেও কথা বলছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা গাজা নিয়ে সমঝোতার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি, সেটি শান্তি স্থাপনে সহায়ক হতে পারে।’
অন্যদিকে, জাতিসংঘে ভিডিও ভাষণে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বিশ্বের নেতাদের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও, ৮৯ বছর বয়সী এই নেতা এখনো নিউইয়র্কে যেতে পারেননি, কারণ যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি দেশের সম্মানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, পর্তুগাল প্রথমে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। এরপর ফরাসি, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো ও ডেনমার্কসহ আরও কিছু দেশও তা স্বীকার করেছে।
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রস্বীকৃতি অস্বীকার করেছে, কারণ তারা মনে করে এটি হামাসের জন্য পুরস্কার হবে। তবে আব্বাস স্পষ্ট করে দেন, ‘শাসনব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার হলে গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণভাবে ফিলিস্তিনের দখলে যাবে এবং এর সাথে পশ্চিম তীরের সংযোগ সম্ভব হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে, ট্রাম্প বুধবার জাতিসংঘে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। সেখানে তারা পশ্চিম তীর দখলের মতো পদক্ষেপের জন্য ইসরায়েলকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতে সতর্ক করে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট খুবই ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন, পশ্চিম তীর দখলের ঝুঁকি ও পরিণতি কতটা মারাত্মক।’