ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ঢাকার প্রতিমা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে ঢাকের তালে উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ এবং ঘণ্টার শব্দে মুখরিত হয় মন্দিরের পরিবেশ। সকাল থেকে অনেক ভক্ত-অতিথি উপস্থিত হয়ে দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানান। রোববার সকাল ৯ টা ১০ মিনিটে বেলগাছের নিচে ঘট স্থাপন ও ষোড়শ উপাচারে ষষ্ঠী কল্পারম্ভ করে পূজা শুরু হয়। এর আগে ভোর থেকেই পূজার আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম সাজানোর কাজ চলছিল। এরপর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে বাংলা হিন্দু ধর্মের অন্যতম মূল উৎসব – শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়, যা শেষ হবে বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গার বিসর্জনের মাধ্যমে। জানা গেছে, দেবী দুর্গা স্বামীর ঘর ছেড়ে তাকে মর্ত্যে পিতৃগৃহে প্রবেশ করেন। এই সময় তার সঙ্গে রয়েছেন তার চার সন্তান – গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী, আরও রয়েছে কার্তিকের কলা বউ। সাধারণত ষষ্ঠীর দিন ‘দুর্গা মায়ের’ মুখ উন্মোচন করা হয়, এবং এই সময় দেবী দুর্গার সাথে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক এবং সরস্বতীর মূর্তি মন্দিরে প্রদর্শিত হয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘সংকল্প ও আরম্ভের মাধ্যমে হয় কল্পারম্ভ, যাতে দেবীর কাছে সমস্ত নিয়ম মেনে পূজার অঙ্গীকার করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘ষষ্ঠীর দিন দেবী বেলগাছের তলায় ঘুমিয়ে থাকেন, সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে তার ঘুম ভাঙানো হয়। এরপর পূজা ও অঞ্জলি দিয়ে দেবীর জন্য শান্তি কামনা করা হয়। ভক্তরা ভোরে অঞ্জলি দিয়ে দেশ-বিশ্বের শান্তি ও শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠার জন্য প্রার্থনা করেন। সন্ধ্যায় দেবীর দর্শন অনুষ্ঠিত হবে এবং মহালয়া, বোধন ও সন্ধিপূজার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এবার দ非法গভাবন অনুযায়ী, দেবীর আগমন গজে অর্থাৎ হাঁটু বা হাতির পিঠে হয়ে থাকছে, যা শস্যের শোভা বৃদ্ধি করে। দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ত্যাগ করে দোলায় চড়ে যান, যা মহামারী বা দুর্যোগের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয়। হিন্দু ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, দেবীদুর্গা শীতকালে কৈলাশ থেকে কন্যারূপে মর্ত্যে আসেন, আবার পুণৰর্তনে তিনি যান। এই পঞ্চ দিনের উৎসবের মধ্যে দেবীর আগমন শুরু হয় আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী থেকে, শেষ হয় দশমীতে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়, যা ২১ সেপ্টেম্বর শুরু হয় এবারের বছর। এই সময়ের মধ্যে, ভক্তরা বিশ্বাস করেন, দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন কাহিনী অনুযায়ী, রাম তিনি তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার সাহায্যে অকালবোধন করেন এবং রাবণকে বধ করে কন্যারূপে তিনি অবতীর্ণ হন। এবার ঢাকায় মোট ২৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় সাতটি বেশি। সারাদেশের মোট মণ্ডপের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৩ হাজার। দুর্গোৎসব উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় উৎসবের আয়োজন করেছে। পাশাপাশি, রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হবে ‘কুমারী পূজা’সহ অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান। এতে সপ্তমী সকালে দেবী দুর্গার নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ এবং মহাসপ্তমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অষ্টমীতে মহাষ্টম্যাদি কল্পরাম্ভ, মহাষ্টমী বিহিত এবং সন্ধিপূজার আয়োজন রয়েছে, যেখানে ভক্তরা মহাপরিস্কারে যোগ দেবেন। মহাঅষ্টমীতে রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজায় দেবী দুর্গার রূপে শিশুকুমারীর আরাধনা হবে। নবমীতে মহানবমীর আগের দিন দুর্গার মহাস্নান, ষোড়শ উপচারে পূজা এবং রাতে আরতি ও প্রতিযোগিতা হবে। বিজয়া দশমী সকালে বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে এই শারদীয় উৎসব। বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে বিজয়া শোভাযাত্রা এবং স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি। এই দিনে, দেবীর অন্য রূপ ‘আনন্দময়ী’ কে বিদায় জানানো হয়, এবং নতুন বছর আসার আগমনের অপেক্ষা শুরু হয়। সবশেষে, প্রতিমার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসব সমাপ্তি ঘটে। এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিয়েছেন অসংখ্য ভক্ত-অতিথি, যাতে উৎসবের সেই ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশীলনগুলো অব্যাহত থাকছে।