গত ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুনের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর, ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহ দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা উস্কে দেয় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এর ফলশ্রুতিতে তিন জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। বছর ঘুরে এ ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ইউপিডিএফ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল আয়োজন করে এবং একই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তির চেষ্টা চালিয়ে যায়।
৭০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগে ইউপিডিএফের মূল সংগঠনের সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এখন আইনি প্রক্রিয়া অধীন। শয়ন শীলের গ্রেফতার হয়ও বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি করে, যেমন খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ সভা এবং অর্ধদিবস হরতাল। পাশাপাশি, অনলাইনে বিভিন্ন অপপ্রচার ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়, যা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।
২৬ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফের কর্মী উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দাইত্বশীল ব্যক্তিদের উস্কানিমূলক প্রচারণার ফলে খাগড়াছড়ি সহ পার্বত্য এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ এবং হরতালের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। এর মধ্যে, ইউপিডিএফের উসকানিতে এলাকাবাসী টহলরত সেনাদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, ফলে তিন সেনা আহত হন। সেনাবাহিনী তাদের ধৈর্য্য ও মানবিকতা দেখিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরের দিন, ২৭ সেপ্টেম্বর, ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গসংগঠন আবারো বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালায়। বাঙালি ও সাধারণ মানুষের উপর গুলি, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ, রাস্তা অবরোধের মতো ঘটনার মাধ্যমে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার মধ্যে পরিস্থিতি এমন আকার নেয় যে, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে।
এরপর, ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে ইউপিডিএফ রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভেঙে সাধারণ জনগণকে উসকানিমূলকভাবে রাস্তা অবরোধে উৎসাহ দেয়। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র, ইট-পাটকেল, গুলতি ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। এতে তিন সেনা অফিসারসহ ১০ জন সৈন্য আহত হন, আবার রামগড়ে বিজিবির যানবাহন ভাঙচুর ও সদস্যদের আহত করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে, সশস্ত্র ইউপিডিএফ সদস্যরা অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে, ফলে ঘটনাস্থলে অনেক লোক গুলিবিদ্ধ হয়। সেনারা দ্রুত অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীদের প্রতিরোধের মাধ্যমে এলাকা শান্ত করে।
একই সময় রামসু বাজার ও আশপাশে দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে। অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কয়েকদিন ধরে চলমান এসব ঘটনার পেছনে বিশ্বস্থভাবে দেখা যায় যে, ইউপিডিএফ ও তার সংগঠনের পরিকল্পনা পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য সুপরিকল্পিত। তারা বিভিন্নভাবে মহিলাদের, শিশুদের এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
আজ (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫), বিজিবি কাপ্তাই ব্যাটালিয়নের চেকপোস্টে অবৈধভাবে পরিবহনকৃত বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে, যা বেশিরভাগই ইউপিডিএফের অপকর্মের অংশ। বিভিন্ন ঘটনা ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বোঝা যায় যে, পার্বত্য এলাকায় আবারও বিভ্রান্তি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে, যা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী সাধারণ জনগণ ও সকল জাতিগোষ্ঠীর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ, সেনা ও অন্যান্য বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারা অপপ্রচার ও উস্কানিমূলক কার্যক্রমে কঠোরভাবে মোকাবিলা করে বাংলাদেশে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।