ইতালিয়ান চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের এক বিশিষ্ট অভিনেত্রী ক্লাউডিয়া কার্ডিনালে আর নেই। তিনি ফ্রান্সের নেমুরস শহরে ৮৭ বছর বয়সে জীবনের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার পরিবার ও কাছের মানুষরা তার পাশে ছিলেন। অভিনেত্রীর এজেন্ট লরাঁ স্যাভরি বলেছেন, ক্লাউডিয়া ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা, অনুপ্রেরণাময় নারী ও শিল্পী, যিনি নিজের শিল্প জীবনের মাধ্যমে অনেকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
ক্লাউডিয়া ১৯৩৮ সালে এপ্রিল মাসে টিউনিসের সিসিলিয়ান পরিবারের শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ‘টিউনিসের সবচেয়ে সুন্দর ইতালিয়ান নারী’ খেতাব অর্জন করেন। প্রথমে তিনি শিক্ষকতা করতে মনোযোগী ছিলেন, তবে পরবর্তীতে সিনেমার জগতে পা রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
তার জীবনে নানা চড়াই-উৎরো আর অনিশ্চয়তা ছিল। এক দুর্যোগের ঘটনায় তাকে অজানা একজনের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হতে হয়, যা তার জীবন বদলে দেয়। তিনি সাত মাস গর্ভবতী থাকার পর লন্ডনে গোপনে ছেলেকে জন্ম দেন, এবং অনেক বছর ধরে তাকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখাশোনা করেন। পরে তিনি স্বীকার করেন, নিজের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার গড়ে তুলার মূল motivation ছিল শুধুমাত্র ছেলে প্যাট্রিকের জন্যই।
তার আন্তর্জাতিক সুনাম আসে ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় কালজয়ী সিনেমা ‘দ্য লিওপার্ড’-এর মাধ্যমে। এরপর তিনি হলিউডেও সাফল্য অর্জন করেন, যেমন ব্লেক এডওয়ার্ডসের ‘পিঙ্ক পার্টনার’ ও সেরজিও লিঅয়েসের ‘ওয়ান্স অন অ্যা টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট’ সিনেমায় তার অভিনয় স্বীকৃতি পায়। তিনি হেনরি ফন্ডা, চার্লস ব্রনসন, আলেন ডেলনেসহ আরও অনেক তারকার সঙ্গে কাজ করেছেন।
বয়সের প্রথম দশক থেকে শেষ পর্যন্ত সরব অভিনয় চালিয়ে গেছেন ক্লাউডিয়া। ২০২০ সালে সুইস টিভি সিরিজ ব্লুইয়ে তার অভিনয় ছিল সমাদৃত। ২০০০ সালে তিনি ইউনেস্কো গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০০২ সালে বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার গ্রহণ করেন। তার এই অসাধারণ জীবনযাত্রা ও কাজের জন্য তিনি চলচ্চিত্র ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবেন।