এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত আউটলুকে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২৫ অর্থবছরে ৪ শতাংশে পৌঁছাবে এবং পরের বছর ২০২৬ সালে এটি আরও বেড়ে ৫ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধারনা অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও, দেশের অর্থনৈতিক ভিত আরও শক্তিশালী হতে পারে।
২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য মূল সংকটগুলো হলো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক আর্থসামাজিক পরিবর্তন, এবং দেশের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ—যেমন বন্যা, শিল্প শ্রমিক বিরোধ, এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। এই সব কারণে দেশীয় চাহিদা কমে গেছে, যা অর্থনীতি প্রভাবিত করছে। তবে, পোশাকশিল্পের রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় কিছুটা সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধির জন্য বড় সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এডিবিের কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং উল্লেখ করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব এখনও বাংলাদেশের উপর স্পষ্ট নয়, আবার ব্যাংকিং খাতেও কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অর্থনীতির কৌশলগত উন্নয়ন জরুরি।
বিশেষ করে, বর্ধিত মুদ্রাস্ফীতি, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও বাজারের সীমাবদ্ধতা, পাশাপাশি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও নীতিব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। শুল্ক বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী শুল্ক অবনমন, বাণিজ্য সংকটের কারণে রপ্তানি sector-এ কিছু প্রভাব পড়তে পারে এবং অবস্থা প্রতিযোগিতামূলক রাখতে রপ্তানিকারকদের ইউনিটের দাম কমানোর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
এডিবি আরও জানিয়েছে, পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতা কম থাকা, পর্যাপ্ত বাজার তথ্যের অভাব, সরবরাহ শৃঙ্খলার অসঙ্গতি এবং অর্থের দুর্বলতার কারণে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ২০২৪ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ১০ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আছে। তবে, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং রপ্তানি দিয়েে দেশের অর্থনীতির গতি পেতে পারে।
২০২৬ সালে, ভোক্তা ব্যয়ের বৃদ্ধি অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে থাকবে। নির্বাচনী ব্যয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ এই সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। তবে, সংকুচিত আর্থিক ও রাজস্ব নীতি, বিনিয়োগের কমতি এবং বৈশ্বিক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির উপর ২০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো এবং ইউরোপের প্রতিযোগিতা কঠোর হওয়ায় রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধির উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় দামের মধ্যে কাটছাঁট করতে বাধ্য হতে পারেন।
এডিবি একটি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্নয়নমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাজ করে। জীবনমান উন্নত, অবকাঠামো নির্মাণ এবং গ্রহের সুরক্ষায় উদ্ভাবনী আর্থিক ও কৌশলগত সমাধান দিয়ে এডিবি এর কার্যক্রম চালায়। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৬৯টি দেশ।