সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী মহাসচিব মাস্টার মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিন মুক্ত ও স্বাধীন না হবে, আমাদের এই সংগ্রাম চলবে এবং পাশে থাকব তারা। আমাদের এই লড়াই অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
আজ শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সামনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ-সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের সময় গাজায় ত্রাণ বহনকারী নৌবহর আটকের ঘটনা ঘটে, যেখানে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ শত শত মানবাধিকার কর্মীকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করে। এই বহরে ছিল প্রায় ৪০টি নৌযান, যেগুলোর অধিকাংশই ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা আটকে দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় অবিরাম গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। নারীরা ও শিশুরা এই হত্যাকাণ্ডের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এ যেন একটি নৃশংস শোকযাত্রা, যেখানে সাধারণ ফিলিস্তিনি জনগণ বর্বরতার শিকার হচ্ছে। তিনি ঘোষণা করেন, আমরা বিশ্বব্যাপী এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র বিরোধিতা করছি ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে আমরা এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছি।
গতকাল যে ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরায়েলী হামলা চালানো হয়, সেখানে পাঁচশ’রও বেশি অধিকার কর্মী ও নৌবাহিনী ট্রাফিক কর্মকর্তাকে আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন জুগিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদিও ফিলিস্তিন ও গাজাকে পৃথক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তবে প্রশংসাসূচক শক্তিধর কিছু দেশের পক্ষ থেকে তৎপরতা চলেছেন ছোট্ট ইসরায়েলের পক্ষে অস্ত্র ও সমর্থন প্রদান করে। এই অপ্রত্যাশিত সহায়তা মানবতার বিরুদ্ধে এক ধরনের অমানবিক খেলা। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জন করবে, ইনশাআল্লাহ। তাই তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান— দ্রুত এগিয়ে এসে ইসরায়েলের দমন অভিযান চালাতে, দখল করা অঞ্চলগুলো মুক্ত করে দিতে এবং ত্রাণবাহী জাহাজের কর্মীদের মুক্তি দিতে। বাংলাদেশ সরকারের নিন্দা ও দোয়া ও মুক্তির আহ্বানকেও তিনি স্বাগত জানান। যতদিন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা না হচ্ছে, ততদিন মুসলমানদের এই সংগ্রাম, সহানুভূতি ও আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে মানবিক সরবরাহের জন্য যাত্রা শুরু করা আন্তর্জাতিক নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাক’ ইসরায়েলি নৌবাহিনী আটক করেছে। এই নৌবহরটি স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করে ইতালি ও গ্রিসের আরও নৌযান যোগ হয়। এর মধ্যে ছিল ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান, যা গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা বহন করছিল।
গাজা উপত্যকার জন্য ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে দিতে এবং ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য প্রায় ৫০০ অধিকারকর্মী বিশেষ জাহাজে করে গাজায় রওনা দিয়েছিলেন। এই নৌবহরে ছিল বিশ্বের ৩৭টিরও বেশি দেশের ৪০০ জনের বেশি অধিকারকর্মী, পার্লামেন্ট সদস্য, চিকিৎসক ও সাংবাদিক। এই মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন। ইসরায়েলি নৌবাহিনী বুধবার এ নৌবহরকে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায়, গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১২০ থেকে ১২৯ কিলোমিটার দূরে, বাধা দেয়। বেশ ক’টি জাহাজ থামিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে যাত্রীদের আটক করে।
এ ঘটনায় তুরস্ক ইসরায়েলকে জলদস্যুতা আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, একই সঙ্গে বাংলাদেশও এই ঘটনা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে নিশ্চিত করেছে এবং আটককৃত সকলকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের এই আচরণের প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।