নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কোনও পক্ষ বা শক্তির প্রভাবাধীন হয়ে আমাদের শাপলা প্রতীক দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা করছে। আইনগতভাবে এই প্রতীক দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও, একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের উচিত নয় যেন রাজনৈতিক দলের স্বার্থে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা করতে।
শনিবার রাতে ঠাকুরগাঁও শহরের আর্ট গ্যালারিতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বিভিন্ন উপজেলার সমন্বয়ক, যুগ্ম সমন্বয়ক ও সংগঠকদের সঙ্গে এক সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যদি নির্বাচন কমিশন স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যায়, তবে বাংলাদেশে একটি মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন কতটা সম্ভব তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে হবে; আইনি ও নৈতিক পথে শাপলা প্রতীকের জন্য সংগ্রাম চালানো হবে।
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উচ্চ মহলে পিআর পদ্ধতিতে জামায়াতের সঙ্গে মতবিরোধ থাকলেও, নিচু মহলে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এনসিপি তাদের সঙ্গে রাজনীতি বা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে না। তবে, জামায়াতের অন্যান্য দাবি যেমন জুলাই সনদ, সংস্কার ও বিচারের ব্যাপারে আমাদের ঐক্যমত বজায় থাকবে এবং সহযোগিতা চালিয়ে যাব।
গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, আলোচনা চলমান থাকায় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে, আলোচনা যদি প্রত্যাশিত ফল দেয়, তা সবাইকে জানানো হবে এবং প্রকাশ্যে আনবে।
সারজিস তাঁর মত প্রকাশ করেন, শেখ হাসিনার সরকারের মত অপ্রিয় পথে হাঁটছে আওয়ামী লীগ, আর জাতীয় পার্টিরও একই পথ অনুসরণ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ, জাতীয় পার্টি সরকারের স্বৈরাচারী ও দমননীতিকে সমর্থন দিয়েছে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক আধিপত্য বন্ধ করতে হবে।
প্রশাসনের ঘনিষ্ঠদের নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কর্মকর্তাসহ কিছু কর্মকর্তারা বিভিন্ন দলীয় স্বার্থে মাঠে নামছেন এবং তোষামোদ চালাচ্ছেন। এর ফলে, সত্যিকারের পেশাদারিত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নয়, অন্যান্য দলও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দিকে ঝুঁকছে, যা দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সনদ মানে সংসদ সদস্য ও সংসদ থেকে পৃথক নির্বাচন নয়, বরং একই নির্বাচন হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন করবেন। এটি একটি কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি, যা আইনি ভিত্তিতে সম্পন্ন হওয়া উচিত। অন্যান্য প্রস্তাবনা বড় ফাঁকফোকর থাকায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন অবশ্যই শক্ত ভিত্তিতে হওয়া উচিত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টাকার জুয়াড়ি হিসেবে দেখা উচিত নয় বলে উল্লেখ করেন সারজিস। তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের মতো জেলায় যখন অনৈতিক কার্যকলাপ ঘটে, তখন এর জন্য শুধু সংশ্লিষ্ট নেতারা নয়, আমাদের সকলেরই দায়ী। গণঅভ্যুত্থানের পর প্রশাসনকে শোষক নয়, সেবক হিসেবে দেখতে চান তিনি।
এছাড়াও, তিনি স্কুল-কলেজে রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পঞ্চগড়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদল কমিটি স্থাপনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্কুল পর্যায়ে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ হওয়া উচিত। যারা এ ধরনের প্রভাব বিস্তার করে, সবাইকে একত্রে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মুর্তজা সেলিম ও জেলার অন্যান্য নেতা।