দেশের ব্যাংক খাতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একসাথে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠন করা হচ্ছে একটি নতুন ব্যাংক—ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক। এই রূপান্তর প্রকল্পের আগে প্রতিটি ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে।
সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যে প্রশাসকদের তালিকা নির্ধারিত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন নির্বাহী পরিচালক মো. শওকাতুল আলম (এক্সিম ব্যাংক), নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার (সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক), নির্বাহী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন (ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক), বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম (ইউনিয়ন ব্যাংক), এবং ট্যাংশালের পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান (গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক)। প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসকের সাথে থাকবেন একজন অতিরিক্ত পরিচালক, একজন যুগ্ম পরিচালক এবং একজন উপপরিচালক।
বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানান। ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘একীভূতকরণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রশাসকদের নিয়োগের বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদ সভায় যুক্ত হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পরই তাঁরা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।’
এই পাঁচ ব্যাংকের এই পরিস্থিতির পেছনে দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ঋণের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করার ইতিহাস রয়েছে। ফলে, এসব ব্যাংক গভীর খেলাপিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকের মোট আমানত প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, আর দেনা (ঋণ) ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশই খেলাপি। বিশেষ করে ইউনিয়ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটিতে ৯৭ শতাংশ, গ্লোবালে ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৬২.৩ শতাংশ, আর এক্সিম ব্যাংকে ৪৮.২ শতাংশ।
এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী প্রয়োজন ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার ২০০ কোটি, আমানত বিমা ট্রাস্ট থেকে আসবে সাড়ে সাত হাজার কোটি, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যোগ করবেন আরো সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার শেয়ার। ইতিমধ্যে সরকারের অনুমতিও পাওয়া গেছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘এটি ব্যাংক খাতের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের একটি নতুন অধ্যায়। তবে, চেয়ারম্যান ও এমডি পদে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে যদি না থাকে, তবে পুনরায় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।’