জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর দেওয়া মতামতগুলো সমন্বয় করে কমিশন আসন্ন দিনগুলোতে আলোচনা চালিয়ে মতামত সংগ্রহ শেষ করবে। তিনি জানিয়েছেন, কমিশনের চলমান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি বিশেষ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও তৈরি করা হচ্ছে, যা খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। এই প্রতিবেদনটি মোটামুটি ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে জুলাই সনদ প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর জমা দেওয়া দলিলসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৮ অক্টোবর বুধবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে কমিশনের তৃতীয় পর্যায়ের বৈঠকের শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ড. আলী রীয়াজ বলেন, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে — যেমন, জাতীয় সনদ, ২০২৫ এর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। তিনি উল্লেখ করেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এই স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত, এবং তারা আশা করছেন, এই ঐতিহাসিক দলিলের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে।
তিনি আরও জানান, ৫ অক্টোবরের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নে গণভোটের আয়োজন করা হবে। আজকের আলোচনার মূল বিষয় ছিল কীভাবে এবং কবে এই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে সেটি নির্ধারণ করা। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে múltiple বৈঠক ও আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, একটি আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করতে হবে, যা দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে — এক ভাগে থাকবে মোশক একমত বিষয়গুলো, আর অন্যটা হবে মতবিরোধের বিষয়গুলো। নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠন করা হবে, যদি গণভোট অনুমোদন পায়।
ড. রীয়াজ বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিনেই পৃথক ভোটের প্রস্তাব দিয়েছে, আবার কেউ কেউ বলেছেন, নির্বাচনের আগেই এই গণভোট আয়োজন করতে। তাদের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, ত্রয়োদশ সংসদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংবিধানে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেবে।
কমিশনের প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ড. আলী রীয়াজ বলেন, এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে এখন সনদটি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত, এবং স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের পথে আমরা অনেকটাই এগিয়েছি। তিনি উল্লেখ করেন, কমিশনের কর্মকাণ্ডের সময় যেন এখনও অবধি প্রধান ইন্সটিটিউশন, অধ্যাপক ড. ইউনূস, যথেষ্ট যত্নসহকারে যোগাযোগ রেখে চলেছেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাধর্মে ইতিবাচক পরিবর্তনের এই সূচনাটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাবে—এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, যথাযথ ঐক্য বজায় রেখে সামনে এগিয়ে যেতে। কারণ, গত বছর ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে একটি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা অবশ্যই চলতে থাকবে, কিন্তু ঐক্য থাকতেই হবে—এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
এছাড়াও, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের পঞ্চম বৈঠকে প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন, যাদের মধ্যে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দল ছিল। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, এতে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। প্রক্রিয়াটির অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদেষ্টা ও তাদের সহকারীগণও বৈঠকে অংশ নেন। সূত্র: বাসস।