জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তিনি এই অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দেশান্তরের বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এর আগে, বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কয়েকজন সাবেক মহাপরিচালকসহ মোট পাঁচজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, যারা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) দায়িত্বে ছিলেন।
নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে বলেন, সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি একথা উল্লেখ করে বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তিনি প্রশংসা করেন, জাতির স্বার্থে সেনাসদস্যরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময়ে সাহসী ভূমিকায় অবদান রেখেছেন। এখনো তারা দেশের সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও উন্নয়নে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। তবে, বলেও উল্লেখ করেন, এই পথে চলাকালীন ন্যায়বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়া অবশ্যই সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত—অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই এর বাইরে নয়।
নাহিদ বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের সময় দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই দলীয় স্বার্থে ব্যবহার হয়েছে, যার প্রভাব এখনো কিছু কিছু সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে র্যাব বা ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে দেখা যায়। তারা গুম, খুন, ক্রসফায়ারসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের সাথে জড়িত। এমনকি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। এই দীর্ঘ আস্থাহীনতার পেছনে রয়েছে গণতন্ত্রের দীর্ঘ ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপে প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বহীনতা।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছ, কলঙ্ক মুক্ত ও পুনঃগঠন করার জন্য আমাদের ঐতিহাসিক একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হ্রাস করতে পারলেও, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক ও সেনা নেতৃত্বের সহযোগিতা অপরিহার্য। নাহিদ আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকারের সঙ্গে সংহতভাবে কাজ করে তারা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। এই উদ্যোগ কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির অধিকার বা মর্যাদার প্রশ্ন নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি মনে করেন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা চায় দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ুক যাতে তাদের স্বার্থ রক্ষা পায়। তাই, তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, গণতান্ত্রিক ও প্রজাতন্ত্রের মূলনীতির অনুবর্তীতেই এসব উদ্যোগ চলবে এবং সেনা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা হবে।
নাহিদ উল্লেখ করেন, তিনি এবং অন্যান্য সকল দেশপ্রেমী নাগরিকরা ৫ আগস্ট থেকে দেশের স্থিতিশীলতা ও ঐক্য রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই শান্তি ও স্থিতিশীলতার মধ্যেই তারা দেশীয় সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের পথ অগ্রসর করছে। যদিও সব আশা পূরণ হয়নি, তবে অগ্রগতির দিকে এগোচ্ছে দেশ। তাঁর মত, এখন মূল লক্ষ্য হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি ও বৈরাগ্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন।