শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। আফগান কর্মকর্তাদের দাবি, এই সংঘর্ষে রাজধানী কাবুলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানের বিমান হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে তালেবান বাহিনী। এই সংঘাতের ফলে পাকিস্তানের কমপক্ষে ৫৮ সেনা নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক্স (টুইটার) পোস্টে জানান, আফগান বাহিনী পাকিস্তানের বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও দখল করেছে। তিনি আরও বলেন যে, এই অভিযানে আফগান তালেবান বাহিনীর ২০ জনের বেশি সদস্য নিহত বা আহত হয়েছেন। তবে এই দাবির সত্যতা সম্পর্কে পাকিস্তান এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
এর আগে হেলমান্দ প্রদেশের মুখপাত্র মৌলভী মোহাম্মদ কাসিম রিয়াজ গণমাধ্যমে বলেন, শনিবার রাতে বাহরামপুর জেলার ডুরান্ড লাইনের কাছে আফগান বাহিনীর পাল্টা অভিযানে ১৫ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। তিনি আরো জানান, এই অভিযানে তিনটি পাকিস্তানি সামরিক ঘাটি দখল করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে আফগান বাহিনী।
আফগানস্তানের সরকারি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, পাল্টা আক্রমণে আরও এক ডজনের বেশি পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। তবে ইসলামাবাদ এই দাবির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
গত বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল এবং পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের বিমান হামলার অভিযোগ তুলে তালেবান সরকার প্রতিশোধের ঘোষণা দেয়। পাকিস্তান অবশ্য এই বিমান হামলার অভিযোগ স্বীকার বা অস্বীকার করেনি। তবে কাবুলকে আশ্বাস দিয়েছে, পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দেওয়া বন্ধ রাখতে।
সংবাদমাধ্যমের খবর, পাকিস্তানের হামলার জবাবে শনিবার রাতে আফগানিস্তানের হেলমান্দ, কান্দাহার, জাবুল, পাকতিকা, খোস্ত, নাঙ্গরহার ও কুনার প্রদেশে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকি লক্ষ্য করে হামলা চালায় আফগান সেনারা। এসব প্রদেশ পাকিস্তান-আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চল।
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এটি পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের জবাবে পাল্টা অভিযান ছিল। মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারাজমি বলেন, স্থানীয় সময় মধ্যরাতে এই অভিযান শেষ হয়। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতেও যদি পাকিস্তান আবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, আমরা প্রস্তুত আছি কঠোর জবাব দিতে।
অপরদিকে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পিটিভি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের তালেবানের হামলার জবাবে পাকিস্তানি বাহিনী দেশটির সীমান্তের ১৯টি চৌকি দখল করে নিয়েছে। কিছু চৌকি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা আগুন লেগে গেছে। সূত্রের মতে, চৌকিগুলোর কিছু নিহত তালেবান সেনা রয়েছে।
রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা তালেবানের মনোজবা ক্যাম্প, জান্দুসার পোস্ট, তুর্কমেনজাই ক্যাম্প এবং খারচর দুর্গ ধ্বংস করে দিয়েছে। এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল, আফগান বন্দুকযুদ্ধে পাকিস্তানের সীমান্তে প্রবেশের জন্য গঠিত এলাকা লক্ষ্য করে। সতর্ক ও প্রস্তুত পাকিস্তানি পোস্টগুলো দ্রুত ও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সূত্র: রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট।