পাকিস্তানের উত্তপশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুরرم সীমান্তে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘাতে পাকিস্তানি সেনা ও আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে গুলি বিনিময় হয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ১২ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হন। এই পরিস্থিতি সাম্প্রতিক কয়েক দিনের মধ্যে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া উত্তেজনা নির্দেশ করে।
রয়টার্সের সংবাদ অনুযায়ী, বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে আফগান তালেবান মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ নিশ্চিত করেছেন যে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে নতুন এই সংঘাতের সূচনা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে আফগান সেনাবাহিনীর চারটি সীমান্ত পোস্ট ও ছয়টি ট্যাংক ধ্বংসের দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকালে কুররম সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আচমকা ও বিনা উসকানিতে হামলা চালায় আফগান সেনা ও তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। এই হামলার জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা আঘাত হানে। এর ফলে আফগানিস্তানের একটি সীমান্ত পোস্ট ও একটি ট্যাংক ধ্বংস হয়, এবং বেশ কিছু আফগান সেনা ও টিটিপি যোদ্ধা নিহত ও আহত হন।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের এক ঘণ্টার মধ্যেই কুররমের ওপারে অবস্থিত খোস্ট প্রদেশের শামশাদ সেনাপোস্টে আক্রমণ চালানো হয়। এই সময় সেখানে থাকা আফগান সেনা ও টিটিপি যোদ্ধাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হন, বাকিরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান। একই সঙ্গে নার্গসার পোস্টও ধ্বংস করা হয়, যেখানে অন্তত চারটি ট্যাংককে লক্ষ্য করে ক্ষয়ক্ষতি সাধন করা হয়।
পরে পাকিস্তানি সেনারা তুর্কমানজাই ও পোলসেন সেনা পোস্টের ওপরও আঘাত চালায়। তুর্কমানজাই পোস্টে ষষ্ঠ ট্যাংক ধ্বংস করা হয়, এবং পোলসেন পোস্টে গোপন জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও ধ্বংস করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
এমন সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আফগান সেনা ও টিটিপি সদস্য নিহত হয়েছেন বলে দাবি করছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আঘাতের মুহূর্তে অধিকাংশ আফগান সেনা ও যোদ্ধারা পালিয়ে যান, অনেকের পক্ষেই সম্ভব ছিল না কোনও প্রতিরোধ গড়ার। এমনকি, কিছু সেনা তাদের আত্মসমর্পণের চিহ্ন হিসেবে সাদা পতাকা তুলে নিয়েছিল।
উল্লেখ্য, এর আগে ১১ অক্টোবর আফগানিস্তান দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানের আক্রমণের প্রতিবাদে প্রতিরোধে সামরিক অভিযান চালায়। সেই সময় পাকিস্তানি সেনা অভিযানে দুই শতাধিক আফগান সেনা ও পাকিস্তানের ২৩ সৈন্য নিহত হন।
এদিকে, পাকিস্তানের দাবি, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতাদের নিরাপত্তা ও প্রশ্রয়ের জন্য আফগানিস্তানকে দায়ী করে, গত ৯ অক্টোবরে কাবুলে বিমান হামলা চালানো হয়। এই হামলায় পাকিস্তানের দাবি, টিটিপি প্রধান নূর ওয়ালি মেসুদসহ বেশ কিছু নেতার মৃত্যু হয়। যদিও আফগান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, পাকিস্তানি হামলার জবাবে তারা পাল্টা আঘাত চালিয়েছে এবং সংঘর্ষ এখনও অব্যাহত রয়েছে।